ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে বেকার যুবকদের দলে টানছে আইএস ও জেএমবি
মমিনুল ইসলাম : পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত জেলাগুলোতে নেটওয়ার্ক বিস্তারে মুসলিম সম্প্রদায়ের বেকার যুবকদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে দলে টানছে আইএস ও জেএমবির মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো। গতকাল সোমবার ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআইর বরাত দিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডিএনএ ইন্ডিয়া।
একটি গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, দলে টানতে বেকার যুবকদের টার্গেট করে আসছে জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। সেই সাথে নিজেদের কর্মপদ্ধতি অনুসরণে যুবকদের টার্গেট করছে আইএসও।
পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্প্রতি মোহাম্মাদ মুসিরুদ্দিন নামে ২৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির গ্রেফতার রাজ্যে এ সন্ত্রাসীগোষ্ঠীটির উপস্থিতিকে স্পষ্ট করেছে। বিশেষত বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমসহ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে জেএমবির উপস্থিতিকে প্রকাশ করেছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলছেন, গ্রুপটি ইতোমধ্যে গোপনে তাদের কর্মকা- শহরের বিভিন্ন জায়গায় প্রসারিত করেছে। ২০১৪ সালের খাগড়াগড় বিস্ফোরণকে রাজ্যে গ্রুপটির বিদ্যমান থাকার দৃঢ় প্রমাণ বলে উল্লেখ করেন এ কর্মকর্তা।
বর্ধমান জেলা সন্ত্রাসী ছকে যুক্ত হয় ২০১৪ সালের অক্টোবরে। ওই সময় খাগড়াগড়ে একটি ভাড়া বাসায় বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরির সময় দুই সন্দেহভাজন জেএমবি সন্ত্রাসী আটক হয়।
প্রকৃতপক্ষে খাগড়াগড় বিস্ফোরণে তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে এ ঘটনায় এনআইএ একটি সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করে। এতে দাবি করা হয়, জেএমবি পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত জেলাগুলো থেকে যুবকদের দলে যোগদান করাচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, সন্ত্রাসীগোষ্ঠীগুলোর মূল টার্গেট বেকার যুবক। জেএমবি সেটাই করছে এবং আইএস একই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। মুসিরুদ্দিনের ঘটনা এ বিষয়টিকে পুনরায় নিশ্চিত করেছে বলে যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, যারা (জেএমবি অনুসারী) এক থেকে দুটি জেলা দেখভাল করে থাকে তাদের নিয়ন্ত্রক রয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী নারীরাসহ শিক্ষিত বেকার যুবকদের প্রতি নজর তাদের।
চলতি বছরের মার্চে দুর্গাপুরে এনআইএর হাতে ১৯ বছর বয়সী এক পলিটেকনিক ছাত্র গ্রেফতার হয়। এ প্রসঙ্গটি টেনে তিনি বলেন, প্রথম বৈঠক থেকেই তাদের মগজ ধোলাই শুরু করা হয়। যা যুবকদের এসব গ্রুপে যোগদানে বোঝাতে সাহায্য করে। এরপর তাদের সীমান্ত জেলাগুলোর প্রশিক্ষণ শিবিরে স্থানান্তর করা হয়।
আবদুস সামি কাশমি নামের এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় হুগলির ধানিয়াখালীর আশিক আহমেদ ওরফে রাজা নামের এক বাসিন্দার নাম উপরে উঠে আসে। উত্তরপ্রদেশে আশিককে ফেব্রুয়ারি মাসে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এনআইএর গোয়েন্দারা আশিকের পৈতৃক ভিটা থেকে কিছু নথিপত্র জব্দ করেছে। সে একজন কিশোর ও তার বিরুদ্ধে কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড না থাকায় প্রাথমিকভাবে তাকে গ্রেফতারে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গোয়েন্দারা।
ওই কর্মকর্তা বলেন, কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড না থাকায় স্বল্প শিক্ষিতদের বেছে নেওয়া এটা তাদের আরেকটি কৌশল। যুবকদের বলা হয় যুদ্ধ কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য তাদের সিরিয়ায় আসার প্রয়োজন নেই। প্রাথমিকভাবে তারা জন্মভূমি থেকেই জিহাদ শুরু করতে পারে।
তিনি বলেন, এটা তেমন কিছুই না। তবে তাদের গুপ্ত হামলা পরিচালনা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। আর এটা তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত থামানো খুবই কঠিন। এইসব শিবিরগুলো অর্থ সংগ্রহের কাজও করে থাকে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কর্মকর্তা আরও জানান, নিয়ন্ত্রকরা তাদের নেতাদের সঙ্গে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিরিয়া, ইরাক অথবা বাংলাদেশ থেকে যোগাযোগ করে থাকে। ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এবং হোয়াটস অ্যাপ ও অন্যান্য ম্যাসেঞ্জারের মাধমে তাদের যোগাযোগ হয়।
তদন্ত টিমের অন্তর্ভুক্ত ওই কর্মকর্তা বলেন, মুসিরুদ্দিনের মোবাইল ফোনের কল লিস্ট ধরে জানা যায় সিরিয়া, ইরাক ও বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে তার মোবাইলে কল আদান-প্রদান হতো। এছাড়া অ্যাপের মাধ্যমে তাদের যোগাযোগ হতো।
গোয়েন্দা সংস্থার ২০১৫ সালের একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, রাজ্যের কিছু জেলায় যুবকদের জেএমবিতে যোগদানের আহবান জানিয়ে পোস্টার করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, মালদা ও বীরভূমের মতো জেলাগুলো আইএসের জন্য ক্রমবর্ধমান আকর্ষণকে প্রত্যক্ষ করছে।
তিনি বলেন, রাজ্যের ধর্মনিরপেক্ষ ও সার্বজনীন প্রকৃতি সীমান্তজুড়ে সন্ত্রাসীগোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র, বিস্ফোরক ও জালনোট চোরাচালান সহজ করেছে। সেই সাথে শহরকে তারা একটি ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। এতে তাদের রেশন কার্ড, পাসপোর্ট, ভোটার আইডি কার্ড ও ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অধিগ্রহণ সহজ হয়েছে। পাশাপাশি এটা সন্ত্রাসীগোষ্ঠীগুলোর অবৈধ অভিবাসনে সহায়তা করছে।
তিনি বলেন, ভারতের নাগরিকত্ব লাভে স্থানীয় নারীদের বিয়ে করা আরেকটি প্রক্রিয়া। তবে প্রকৃত কর্মকা- ঢেকে রাখতে এটা একটি পর্দা মাত্র। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ