মন্ত্রীদের জঙ্গিবিরোধী প্রচারে নামার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
আনিসুর রহমান তপন : সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ম্যান টু ম্যান কথা বলতে হবে। জঙ্গিবাদের কুফল নিয়ে আলোচনা করতে হবে। সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এভাবেই সব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য জানান, মন্ত্রিসভার অনির্ধারিত আলোচনায় প্রথমেই উঠে আসে গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গিহামলার প্রসঙ্গ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশি-বিদেশি চক্র বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণœ করতে উঠেপড়ে লেগেছে। তরুণদের একাংশকে নানাভাবে তারা মগজ ধোলাই করে নিজেদের দলে টানছে। তাই জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পাশপাশি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে।
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের জঙ্গিবিরোধী প্রচারণায় নামার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের প্রত্যেকের সঙ্গে, অধিনস্ত বিভাগ-অধিদফতর-পরিদফতর ও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বাড়াতে হবে। দেশের প্রতিটি এলাকায় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধ জনমত গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি এলাকা যেন আমাদের নজরদারিতে থাকে সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ উঠেছে সেগুলোকে বিশেষ নজরদারিতে রাখতে হবে। এসময় মন্ত্রিসভার এক সদস্য ধর্মীয় শিক্ষা বাতিলের প্রস্তাব করলে তা নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা বন্ধ করতে হবে কেন? তবে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় শিক্ষাটা দেয় তার উপর জোর দিতে হবে। জুমার নামাজে খুতবায়, ওয়াজ-মাহফিলের বয়ানের পাশাপাশি ইমাম ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণা জোরদার করতে হবে।
এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম ১৪ দলের স্থানীয় কমিটি দিয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো সম্ভব বলে মন্তব্য করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঠিক বলেছেন।
গুলশানের আর্টিজান হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে গুলশানের ঘটনা মোকাবিলা করেছে। দেশের বাইরে অনেকে মনে করতে পারে যে, জঙ্গি মোকাবিলায় আমরা সক্ষম নই। এ ঘটনার পর বিদেশিরা বাংলাদেশে আসবে না অনেকের এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফ্রান্স, ব্রাসেল্স ও ইস্তান্বুলের মতো হাইসিকিউরিটি এলাকার বিমান বন্দরে জঙ্গিহামলা হয়েছে। আমাদের এখানে তো এখনও তেমন কিছু ঘটে নাই। আবার ফ্রান্সের হামলার পরওতো সেখানে আবহাওয়াবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কই সেটাতো বন্ধ হয় নাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই বলছেন গুলশানের ঘটনায় জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি হবে। গুলশানে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার নিহত পাঁচ কর্মকর্তার বদলি কর্মকর্তারাও শিগগিরই বাংলাদেশে আসছেন বলে জাপানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
গুলশানের রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় শুধু সেদিন ভারতীয়, ইতালীয় ও জাপানি নাগরিক হত্যাকা-ের ঘটনাকে টার্গেট কিলিং উল্লেখ করে মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য এটাকে উদ্দেশ্যমূলক বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
এ আলোচনার মাঝখানে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু প্রধানমন্ত্রীকে জানান, ঈদের দিন জঙ্গিরা ঈদের জামাতে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে হামলা করেছিল। কিন্তু প্রশাসন সেদিন মুসল্লিদের নিরাপত্তায় প্রায় এক হাজার পুলিশ, র্যাব বিজিবি ও আনসার মোতায়ের করে। প্রতিটি প্রবেশ পথে একাধিক চেকপোস্ট বসিয়ে নিরাপত্তা তল্লাশি করে। আবার এর আগে জামাত আয়োজক কমিটি ঘোষণা দিয়েছে যে, ঈদের জামাত স্থলে ব্যাগ বা ভারী কোনো কাপড় সঙ্গে আনতে পারবে না। ফলে প্রথমেই জঙ্গিদের পরিকল্পনায় গ-গোল হয়ে যায়। জনগণের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নিরাপত্তা বাহিনী সেদিন জঙ্গিদের প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয় বলে জানান শ্রম প্রতিমন্ত্রী।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমার সঙ্গে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। আমি তৎক্ষণাৎ তাদের নির্দেশ দেই যাতে মাঠে উপস্থিতরা জোরে জোরে ওয়াজ করা শুরু করেন। গুলি বা বোমা মারার আওয়াজ মাঠে উপস্থিত মুসল্লিদের কানে না পৌঁছায়। শেখ হাসিনা বলেন, এভাবে একটি বড় দুর্ঘটনা থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করেন। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি