দুষ্টচক্র বাদ দিতে রাষ্ট্রকে খুতবা তৈরির পরামর্শ
আরিফুর রহমান : জঙ্গি ঠেকাতে সরকারের জুমার নামাজে খুতবার ওপরে নজরদারির পাশাপাশি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে খুতবা তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শামীম মোহাম্মদ আফজাল। তিনি মনে করেন এর ফলে খুতবা নিয়ে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ও সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি হবে এবং কোনো দুষ্টচক্র ইসলামের অপব্যাখ্যা করার সুযোগ পাবে না।
সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে মসজিদে মসজিদে ইমামরা কোন ধরনের ধর্মীয় অনুশাসন প্রচার করছেন তার ওপর নজরদারী রাখা হবে এবং সুযোগ পেলে তা তদন্ত করা হবে। এ মাসের গোড়ার দিকে গুলশানে সন্ত্রাসী হত্যাকা-ের প্রেক্ষাপটে গত রোববার আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে শুক্রবারের খুতবার ওপর নজরদারী করার এ সিদ্ধান্ত দেশের কয়েক লাখ মসজিদে বাস্তবায়ন করা কিভাবে সম্ভব? বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে ইসলামী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, পৃথিবীর বহু দেশে খুতবা সাধারণত রাষ্ট্র কর্তৃক রচনা করে দেওয়া হয়। সেটাই সব মসজিদে খুতবার সময় পড়া হয়। আমাদের দেশে বিশেষ করে পাক-ভারত উপমহাদেশে এ সিস্টেমটা সেভাবে চালু হয় নাই। জাতীয়ভাবে দেশের বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম কুরআন-সুন্নাহ এবং দেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতির আলোকে রচনার উদ্যোগ নেওয়ার পর তা সকলে অনুসরণ করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মসজিদ ধর্মীয় চর্চার একটা প্রাণকেন্দ্র হতে পারে।
সৌদি আরবে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দিয়ে দেওয়া হয়, শুক্রবারে কি খুতবা পড়া হবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে সেই ধরনের চিন্তা করা হচ্ছে কিনা বিবিসির আরেক প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ আফজাল বলেন, এ মুহূর্তে আমি সরকারের সার্কুলার হাতে পাই নাই সে কারণে এ ব্যাপারে আমি মতামত দিতে চাচ্ছি না। তবে আমি চাচ্ছি আমার প্রতিষ্ঠান দেশের বিজ্ঞ আলমগণ বা যারা মুরুব্বি আছে তারা মিলে যদি একটা খুতবা রচনা করে দেন এবং এটা যদি সকল মসজিদ অনুসরণ করে, তাহলে শিক্ষার চর্চা বাড়বে। এখন থেকে ১শ বছর আগে যত আলেম ছিলেন তারা পড়াশোনা করে জ্ঞান অর্জন করতেন। বর্তমানে এলেম অর্জনের ক্ষেত্রে মাদরাসাগুলোতে কিছুটা ব্যত্যয় ঘটেছে। এ অবস্থা থেকে উদ্ধার হতে গেলে আমাদের প্রকৃত আলেম তৈরি করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত মাদরাসা শিক্ষাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা না যাবে ততদিন পর্যন্ত এ সমস্যা থাকবে। খুতবা যেহেতু ইসলামের একটা মৌলিক দর্শন, সেই দর্শনে মুরুব্বিয়ানে কেরাম যদি জাতীয়ভাবে সহযোগিতা করে তাহলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশও অনেকে উপকৃত হবে বলে মনে করি।
এখন যেটা দেখা যাচ্ছে এটা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা না, পৃথিবীতে এটা হচ্ছে এবং ইসলামকে একেকজন একেকভাবে ব্যাখ্যা করছেন, সেখানে সমস্যা হচ্ছে সুতরাং সবাই একই ধরনের কথা বলবে এটা সম্ভব কিনা সে প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আফজাল বলেন, প্রকৃত ইসলাম নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কোনো কারণ নেই। এখন যারা মওদুদি-জামায়াতের মতো বিশ্বের কিছু কিছু মোনাফেক চক্র ইসলামকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কুরআন-হাদিসের ব্যত্যয় ঘটানোর একটা রাস্তা সৃষ্টি করেছেন। যে রাস্তার মধ্যে ড. জাকির নায়েকের মতো ‘দাঁতের ডাক্তার’ও এখন কুরআনের আলেম হয়ে গেছেন। এসব দুষ্টচক্রগুলো থেকে আমাদের মুক্ত থাকতে হবে। বাধ্যতামূলক আইন করার কথা এখনই আমি বলছি না। তবে জনগণকে প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ