আতঙ্ক সরাতে হবে সবার আগে
প্রণব সাহা
গলফার সিদ্দিকুর সরাসরি অংশ নিবেন অলিম্পিকে। উড়াবেন লাল সবুজ পতাকা। কতটাই আনন্দের খবর। কিন্তু আমাদের মনে তো আতংক। ঈদের আনন্দ গেল, কক্সবাজার সাগর সৈকতে লাখো মানুষের কোলাহল মিলিয়ে গেল, আবারও কাজে ফিরছে বাংলাদেশ। কিন্তু গুলশানের হলি আর্টিজানের পর শোলাকিয়ার রক্তাক্ত স্মৃতি কবে ভুলব আমরা। দেশের যুবকরা তো সবাই জঙ্গি নয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীকেই সন্দেহের চোখে দেখা ঠিক হবে?
শতাধিক যুবক নিখোঁজ। মা-বাবা খুজে পাচ্ছেন না প্রিয় সন্তানদের, তারা কি সবাই নীরবে চোখের জল ফেলছে। তারা কি মুখ খুললেই সবাই তাদের সন্দেহ করবেন যে, তাদের সন্তানেরা চলে গেছে জঙ্গিদের কবলে। অনেকেই কি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে উত্তরাঞ্চলের কোনো দুর্গম চরে?
এই লেখা যখন লিখছি, তখন গণভবনে দেওয়া জেলা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তার বক্তব্য শুনছিলাম। দৃঢ় কণ্ঠেই তিনি বললেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। দেশের মানুষই তাই মনে করেন। বারবার প্রধানমন্ত্রী বলছেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। ১৪ দল পাড়া মহল্লায় সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে আতঙ্ক কাটিয়ে জঙ্গি-সন্ত্রাস বিরোধী জাতীয় উদ্যোগে সামিল করার উপায় কী?
আরেকটি গণজাগরণ দরকার। এই বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুধু নয়, রায় কার্যকর করেছে। স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী এবং মহাসচিব ফাঁসির দড়িতে ঝুলেছে। কিন্তু জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এমনকি জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত সংগঠনগুলোর নেতারা আছেন জেলখানায়। কিন্তু তাদের বিচার প্রক্রিয়া থমকে আছে। অভিযুক্ত জঙ্গিরা তো বসে নেই। তাহলে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা যে তৎপর কী করে তা বুঝব?
প্রধানমন্ত্রী কাল বলেছেন, যেসব এলাকায় বড় বড় প্রকল্পের কাজ চলছে, সেসব এলাকার জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। আসলে সকলকেই নিজ দায়িত্বে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখতে হবে। পরিবারে, সমাজে সবাই নিজ চোখ-কান খোলা রাখা দরকার। ধর্মীয় উগ্রবাদিতা থেকে দূরে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোনো ধর্মই অপর ধর্মের বিরুদ্ধে বিষোদগার সমর্থন করে না। ধর্মের নামে নিজ ধর্মের মানুষকে জবাই করে কি লাভ হবে? পরিবারের শিশু যুবক সবাইকে স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে নিজেদেরকে। আর রাষ্ট্রের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, এর জন্য দরকারী সবকিছুর নিশ্চয়তা দিতে হবে।
লেখক : সম্পাদক, ডিবিসি নিউজ
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন