স্টার জলসা দেখা কি অপরাধ?
বিলকিস ইরানি
স্টার জলসা, স্টার প্লাস বন্ধে উঠেপড়ে লাগছেন আপনারা, পর্নো মুভি পর্নো সাইট বন্ধে উঠেপড়ে লাগতে পারেন না? ভেবেছেন একবার? কেন গৃহিণীরা স্টার জলসা আর স্টার প্লাস দেখতে এত আগ্রহী? ভেবেছেন? আপনার ঘরের সহধর্মিনীকে তো মানুষ বলে মনে হয় না, মনে হয় খেলনা পুতুল, আপনি যেভাবে চালাবেন সেভাবে চলবে, আর মা কিংবা বোনের প্রতি তো নজরও দেন না, মা কোনটা পছন্দ করে, বোন কি পেলে খুশি হয়, ভাবেনও না, যে সময় তাদের নিয়ে ভাববার বিষয় সে সময় সুন্দরীদের পেছনে ঘুরেন বান্ধবী কিংবা বউ বানাবেন বলে, আর বউ হয়ে গেল মানে সে আপনার গোলাম, আপনি যেভাবে চাইবেন সেভাবেই তাকে চলতে হবে। (অনেক ছেলের মুখে এই কথা শুনেছি, এবং স্টার জলসা ও স্টার প্লাস বন্ধে উঠেপড়ে লেগেছেন অধিকাংশ ছেলেরাই) একবার কি ভেবেছেন, একজন মানুষের বিনোদন দরকার আছে কিনা? সেটা ঘরে কিংবা বাইরে? একজন মানুষ একা একা সারাদিন ঘরে বসে থাকলে তার মানসিক বিকাশ কি করে হবে? কিভাবে সে মন খুলে হাসবে কথা বলবে? এভাবে থাকলে তো যেকোনো সময় অবসাদ, বিষণœ কিংবা মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়বে আপনার প্রিয় নারী সদস্যটি। ভাবনার জায়গাটাও যে তার সংকুচিত হয়ে আসবে।
আপনি তো বাইরে চলে যান, চাকরি করেন কিংবা অন্য কোনো কাজ আর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তাই মন প্রফুল্ল থাকে, বুঝতে পারেন না বিষণœতা কি। ঠিক একজন নারীও যখন বাইরে চাকরি করেন কিংবা বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দেন তিনিও প্রফুল্ল থাকেন, মানসিক যন্ত্রণা তাকেও ছুঁতে পারে না।
কিন্তু যারা চাকরি করেন না, বাইরে বের হন না, আড্ডা দেওয়ার সুযোগও নেই, ঘরে থাকেন একা একা, তাদের বিনোদন কোথায়?
কই, আপনি তো আপনার পরিবারের ওই নারী সদস্যকে নিয়ে প্রতিদিন তো দূরে থাক সপ্তাহে দুইটা দিনও নিয়ে বাইরে ঘুরতে বের হন না?
তাই ঘরে বসে স্টার জলসা কিংবা স্টার প্লাস দেখে একটু সময় কাটানো, বিনোদন পাওয়া ছাড়া আর কিই-বা করার থাকে তাদের? আপনার মতো তারা যদি স্টার জলসা, স্টার প্লাস না দেখে চুপি চুপি এম টিভি, ইংলিশ অশ্লীল মুভি, অর্ধ উলঙ্গ হিন্দি সিনেমা, সানি লিওন কিংবা পর্নো সাইট দেখত? ভালো লাগত তখন? (অবশ্য আপনারা সবাই যে এসব দেখেন তা বলছি না, কিছু কিছু মানুষের কথা বলছি) স্টার জলসা আর স্টার প্লাসে অধিকাংশ নাটক ফ্যামিলি সমস্যা আর সমাধান নিয়ে, অন্যসব দেখার চেয়ে এগুলো দেখা ভালো নয়কি?
ভেবে দেখেন তো, আপনার মা, বোন কিংবা সহধর্মিনী যারা বাইরে যেতে পারেন না কিংবা আপনি নিয়ে যেতে পারেন না, সারাদিন ঘরে একা একা থাকে, তারা কিসে বিনোদন পাবে? বলবেন এসব দেখে সংসার ভাঙে? ভাঙবে না কেন? আপনি যদি নিজে জিদ চাপিয়ে রিমোট কেড়ে নিয়ে বলেন স্টার জলসা দেখতে দেবেন না, রিমোর্ট নিয়ে খেলা দেখবেন আপনি, কারণ খেলা আপনার পছন্দ, কিন্তু খেলা তো তার পছন্দ নাও হতে পারে? পৃথিবীর সবাই একরকম না, অথচ তাকে তার পছন্দের জিনিস দেখতে না দিয়ে উল্টো বলবেন স্টার জলসা দেখলে তালাক দেব, তো সংসার না ভেঙে উপায় আছে? আর বাংলা চ্যানেল এর কথা বলবেন? মানসম্মত নাটক হলে তা না দেখে যাবে কোথায়?
কেন বিষয়টি পজেটিভলি দেখছেন না আপনারা?
তারাও তো মানুষ? তাদেরও তো বিনোদন প্রয়োজন। বাইরে বের হতে দিবেন না, নিজেও বেড়াতে নিয়ে যাবেন না, বন্ধু বান্ধবীদের সঙ্গে আড্ডা দিলেও খারাপ চোখে দেখবেন, আবার ঘরে বসে একটু টিভিও দেখতে দেবেন না! এটা কি ধরনের আচরণ?
হ্যাঁ, আমি স্টার জলসা কিংবা স্টার প্লাস দেখি না, দেখার সময়ই বা কোথায়? সময় পেলে হাসির নাটক কিংবা সিনেমা দেখি। সারাদিন কাজ সেরে যখন সন্ধ্যায় কিংবা রাতে বাসায় ফিরি তখন দেখি অসুস্থ আমার মা একা একা ঘরের সব কাজ সেরে বিছানায় শুয়ে শুয়ে রিমোটটা হাতে নিয়ে স্টার জলসা কিংবা স্টার প্লাস কিংবা হাসি কান্নার কোনো নাটক দেখছেন, কখনও তা দেখে হাসছেন কখনও বা কাঁদছেন, কখনও আবার রাগও করছেন। নিজেকে সুস্থ রাখার বড় ঔষধ হচ্ছে মন খুলে হাসতে পারা।
একা ঘরে বসে থাকা মানুষটির এই সামান্য হাসিটুকুও কি আমাদের সহ্য হয় না? তাও কেড়ে নিতে হবে?
বলুন তো, আমার পক্ষে কি সম্ভব মায়ের কাছ থেকে ওই মুহূর্তে রিমোট কেড়ে নেওয়া?
লেখক : সাংবাদিক, রেডিও টুডে
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন