‘ওরা’ পরাজিত হবেই
২০০১ সালের ১ অক্টোবরের পর মৌলবাদী, জঙ্গিবাদী এবং স্বাধীনতাবিরোধী জোট সরকারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে কিংবা আশ্রয়ে বিরোধিদলের কত লোকের মৃত্যু হয়েছে, কত সংখ্যক মানুষ ঘর-বাড়ি বসত-ভিটা ছেড়েছে কিংবা মহিমা-পূর্ণিমাদের মতো কত নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে, সে তথ্য আমার জানা নেই। তবে একথা নিশ্চিত করে বলতে পারি, ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী দিনগুলোতে বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী বর্বরোচিত ঘটনাগুলো বিশ্ব বিবেককেও নাড়া দিয়েছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের বিবেককে স্পর্শ করেনি। ২০০৪ সালের ৭ মে জনসভা চলাকলে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয় জনপ্রিয় নেতা আহসানউলাহ মাস্টার এমপিকে। আহসানউলাহ মাস্টারকে হত্যার পর বাবর-তারেকের হাওয়া ভবন যেন আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। একজন মন্ত্রীর (তৎকালীন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু) সরকারি বাসভবনে জঙ্গি নেতাদের নিয়ে একটি দেশের বিরোধিদলীয় নেত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এ জঘণ্য অপরাধের ঘৃণা প্রকাশের ভাষা আমাদের জানা আছে কি? তারেক-বাবরের পরিকল্পনায় শেখ হাসিনাকে হত্যার চূড়ান্ত তারিখ এবং স্থান নির্ধারিত হয় ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে।
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালীন শেখ হাসিনাকে যতবার হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে, তা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এ পরিস্থিতিতে এবং গণদাবির প্রেক্ষিতে ২০০১ সালে সংসদে জাতির জনকের পরিবারের সদস্যদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য বিল পাস হয়। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পরিকল্পিতভাবে সে আইন বাতিল করে শেখ হাসিনাকে নিরাপত্তাহীন অবস্থায় ফেলে ঘাতকদের উস্কে দিয়ে হত্যার পথ প্রশস্ত করে দেয়। জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে সে ঘৃণীত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে নারকীয় হত্যাকা-ের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু ঘাতকদদের মূল টার্গেট ব্যর্থ হয়। গুরুতর আহত হয়েও বেঁচে যান শেখ হাসিনা।
এরপর তারেক-বাবরের পরিকল্পনায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের আড়াল করতে ঘৃণিত-ধিকৃত মিথ্যাচার নাটক আমাদের সকলেরই জানা। জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে হাওয়া ভবনের কুকীর্তি, ভ-ামির সব মন্ত্র জাতির কাছে ফাঁস হয়েছে। গণধিকৃত বাবর-পিন্টু আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। ইতিহাসের আলোয় সত্যের জয় হয়েছে। এখন বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে ঘাতকদের বিরুদ্ধে রায় দ্রুত কার্যকর করতেই হবে।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে জয়ের পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদ-জঙ্গি গোষ্ঠী এবং ’৭৫ সালের ঘাতক ও তাদের দোসরদের রক্তচক্ষুতে পরিণত হয়েছেন। তার সামনে এখন অসংখ্য যুদ্ধের ফ্রন্ট। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া মৌলবাদী রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া এবং দেশকে দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসমুক্ত ঘোষণার চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া। প্রতি মুহূর্তেই ওঁৎ পেতে বসে আছে ঘাতক চক্র। সুযোগ পেলেই ওরা শেখ হাসিনাকে হত্যা করে বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতি করবে। দেশকে বানাতে চায় জঙ্গি কিংবা মৌলবাদীদের অভয়ারণ্য। লেখক, প্রকাশক, চিকিৎসক, শিক্ষক, ইসলামি চিন্তাবিদ, হিন্দুধর্মীয় পুরোহিত বা সেবক, খ্রিস্টান, বৌদ্ধÑ প্রায় সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যার মাধ্যমে জঙ্গিগোষ্ঠী বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল, নৈরাজ্য ও বিবর্ণময় পরিণত করতে সদা তৎপর। যেমনটি করেছিল ২০০১-২০০৬ সালে। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস, ওরা পরাজিত হবেই। সৃষ্টিকর্তার অসীম কৃপায় জননেত্রী শেখ হাসিনা বহুমুখী এ যুদ্ধের ময়দানে অবশ্যই সফল হবেন। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রতিটি প্রগতিশীল বাঙালিকে এই যুদ্ধে শরিক হতে হবে। সামাজিক আন্দোলন ও গণজোয়ার সৃষ্টির মাধ্যমে জঙ্গি অপতৎপরতা, গুপ্তহত্যা, টার্গেট কিলার ও দেশবিনাশী ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার এখনই সময়।
লেখক : অধ্যাপক ও সমাজ বিশ্লেষক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন