
‘পানি না সরলে মোগো এবার বাঁচন নাই’
বীরেন্দ্র কিশোর, বরগুনা : মুষলধারে টানাবর্ষণ আর অমাবশ্যার জোয়ারে মাঠ-ঘাট, নদী-নালা, খাল-বিল একাকার। ডুবে গেছে আউশের ক্ষেত। ভেসে গেছে পুকুর-ঘেরের মাছ। পানিতে ডুবে পঁচে গেছে রবি ফসল, পানের বরজ। দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। দিন মজুরেরা পাচ্ছে না কাজ। অর্ধাহারে অনাহারে কাটছে তাদের দিন। বৃষ্টি কমে গেলেও পানি সরতে না পারায় পানিবন্ধী রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। কারো কারো রান্না ঘর তলিয়ে যাওয়ায় চলছে না রান্নার কাজ। গবাদি পশুর খাদ্যেও দেখা দিয়েছে তীব্র সঙ্কট। বীজতলা তৈরি করতে না পারায় আমন আবাদও ব্যাহত হওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বছর বরগুনায় ৪৩ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে আউস আবাদ এবং ৯৩ হাজার ৯৯৪ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৯৮ হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ করা হয়েছিল। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৬২৪ হেক্টর কম জমিতে আউস আবাদ হয়েছে। যা হয়েছে তাও পানিতে ডুবে একেবারেই পঁচে গেছে। অপর দিকে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ০৩ হাজার ৩১০ হেক্টর জমি। কিন্তু এ যাবত যেখানে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি এবং বীজ বপণের কথা সেখানে মাত্র ২ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলায় বীজবপণ করা হয়েছে। তাও আবার ২-৩ ফুট পানির নীচে ডুবে রয়েছে প্রায় সব বীজতলাগুলো।
এবছর বোশেখ মাস থেকে প্রচন্ড খড়ায় পানির অভাবে বরগুনা জেলার কোথাও কোথাও একেবারেই আউসের আবাদ করতে পারেনি চাষীরা। এখন আষাঢ়ের শেষ পর্যায়। আমন ধানের বীজতলা তৈরি করার সময়। গত সাত আট দিনের প্রবল বর্ষণে এতটাই পানি বৃদ্ধি পেয়েছে আমন ধানের বীজতলার জমি প্রায় ৪-৫ ফুট পানির নীচে তলিয়ে রয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাসনেরও কোন সম্ভাবনা নেই। কারণ এখানকার প্রায় প্রতিটি মাঠের সাথে খালগুলোর কোন সংযোগ নেই। কোথাও কোথাও খালের উপর দিয়ে চলে গেছে মহাসড়ক। কেউ কেউ আবার খালগুলো ভড়াট করে তৈরি করেছে চাষের জমি বা বাড়িঘর। কোথাও বা বাঁধ দিয়ে পুকুরের মত তৈরি করে করা হচ্ছে মাছ চাষ। বরগুনা সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের ছোটবদরখালী গ্রামের দরিদ্র পানচাষী রনজিত রায় জানান, বার্ষিক লিজে নেয়া তার প্রায় ৩০ শতাংশ জমির পানের বরজ পানিতে তলিয়ে গেছে।
একটু রোদ ওঠায় পানের লতাগুলো শুকিয়ে ঢলে পড়েছে। পানগুলো একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে তার। কি করে তিনি দেনা শোধ করবে এ চিন্তায় তার ঘুম আসছে না। একই কথা জানালেন ওই গ্রামের পানচাষী সুখরঞ্জন গোমস্তা, যুগল রায়, শঙ্কর হাওলাদারসহ অনেকে। ধানচাষী আলমগীর হাওলাদার বলেন, খড়ায় আউস দেতে পারি নায়, এহন আবার পানিতে তলাইয়া রইছে আমন ধানও এবার দেতে পারমু কিনা জানি না। সবজি চাষী ব্রজেশ্বর সরকার জানান, বইষ্যার পানিতে ঝিংগা, করল্লা, চিচিংগা, শসার ক্ষেত ডুবে পঁচে গেছে। একই কথা জানালেন, মাধব সরকার, দিপঙ্কর মাঝিসহ অনেকে। পানি না সরলে মোগো এবার বাচন নাই বললেন, সবজিচাষী যাদব সরকার। আপনারা পানি সরাইন্না ব্যবস্থা হরেন।
বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইনুর আজম খান বলেন, এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশাকের সম্মেলন কক্ষে মাসিক সভায়ও আলোচনা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
