
বরিশালে অঘোষিত রেড এলার্ট!
শামীম আহমেদ, বরিশাল : সাম্প্রতিক সময়ে গুলশান ও শোলাকিয়ায় বড় ধরনের জঙ্গি হামলার পর নড়েচড়ে বসেছে বরিশালের পুলিশ। আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাড়ানো হয়েছে পুলিশি নজরদারি। পাশাপাশি নগরীর জনগুরুতপূর্ণ এলাকাসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও নিরাপত্তার স্বার্থে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের। এছাড়া বরিশাল জেলা ও মহানগরের প্রবেশদ্বারে বসানো পুলিশি চেকপোস্টে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের পাশাপাশি যানবাহনেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
সূত্রমতে, গত কয়েকদিন ঈদ উদযাপনের মধ্যে পুলিশের এমন নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়টি জনমনে ভীতির সৃষ্টি করলেও নিরাপত্তার স্বার্থে সচেতন নগরবাসী প্রশাসনের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। জানা গেছে, রাত ১০টার পরপরই বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পোশাকধারী পুলিশ অবস্থান নিয়ে বিনোদনপ্রেমীদের অবস্থান ত্যাগে বাধ্য করছেন। তাছাড়া নগরীর একাধিকস্থানে রাতের বেলা একইসাথে চেকপোস্ট বসানোয় জনমনে কিছুটা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের কড়াকড়ি আরোপে নগরীতে যেন এক ধরনের অঘোষিত ‘রেড এলার্ট’ চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গুলশানে জিম্মি সঙ্কটের পর পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী নগরবাসীর নিরাপত্তায় এধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এরইমধ্যে ঈদুল ফিতরের নামাজে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় নামাজে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়। মাঠপর্যায়ের যেসব কর্মকর্তা ছুটিতে ছিল তাদের ছুটি বাতিল করে স্ব-স্ব কর্মস্থলে নিয়ে আসা হয়েছে।
তাদেরকে নতুন নতুন দিক নির্দেশনা দিয়ে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করতেও বলা হয়েছে। অবশ্য এই বিভাগের বরগুনা ও ভোলা জেলায় অতিসম্প্রতি কিলিংটার্গেটের ঘোষণা দিয়ে ‘পুরোহিত হত্যা’ নামের একটি সংগঠন মন্দিরের পুরোহিতকে খুনের বার্তা পাঠায়। এছাড়াও নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরিরের অন্যতম সদস্য ফাইজুল্লাহ ফাহিম গত ১৮ জুন মাদারীপুরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার আগে পুলিশকে জানিয়েছিলেন তাদের পরবর্তী টার্গেট বরিশাল।
ফাহিম মাদারীপুরের শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল বরিশালের এক আইনজীবীর চেম্বারে বসে। ফলে সেই ঘটনার পর থেকে বরিশাল বিভাগের সবগুলো জেলায় পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পাশাপাশি চিঠি পাঠিয়ে হুমকি দাতাদের সন্ধান করছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এমতাবস্থায় বরিশালকে নিরাপদ মনে না করে যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি রোধে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে পুলিশ। সম্প্রতি সময়ে স্পর্শকাতর হামলার ঘটনাগুলো সম্পর্কে নগরবাসী অবগত থাকায় পুলিশের কঠোর পদক্ষেপকে ইতিবাচক দিক হিসেবে মেনে নিয়েছেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মূখপাত্র সহকারি কমিশনার (এসি) মো. ফরহাদ সরদার জানান, নগরবাসীর নিরাপত্তায় পুলিশ কাজ করছে। কেউ যেন কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বা অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিমও মাঠে রয়েছে। এ ব্যাপারে বরিশাল রেঞ্জের উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, গুলশান বা শোলাকিয়ার মত কোন ঘটনা এ অঞ্চলে সন্ত্রাসীরা যাতে না ঘটাতে পারে সেজন্য স্ব-স্ব জেলার কর্মকর্তাদের অনেক আগেই দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
