
ব্যাটন রুজে প্রতিবাদে কে এই নারী
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আফ্রিকান আমেরিকান নাগরিক ও পুলিশের মধ্যে গেল সপ্তায় ঘটে যাওয়া রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তাগুলোতে এখনো চলছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ, প্রতিবাদ। বিডিনিউজ
রোববার কেবল লুইজিয়ানার বাটন রুজ থেকেই ডজনের উপর প্রতিবাদকারীকে আটক করা হয়েছে, যে শহরে গেল মঙ্গলবার কৃষ্ণাঙ্গ এক যুবক পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। আমেরিকাজুড়েই এখন বর্ণবাদ আর পুলিশের সামরিকায়ন নিয়ে চলছে তীব্র উত্তেজনা আর বিতর্ক, কেবল একটি ছবিতে এসেই সব থমকে যাচ্ছে।
কৃষ্ণাঙ্গ এক তরুণী নীরব প্রতিবাদে দাঁড়িয়েছেন উদ্ধত পুলিশের সামনে; তার লম্বা পোশাক বাতাসে উড়ছে। মুখোমুখি দুই পুলিশ সদস্য কালো পোশাক আর হেলমেট পরে, রায়ট ঠেকানোর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চেষ্টা করছেন নারীটিকে লুইজিয়ানার ব্যাটন রুজের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে।
ছবিটি তুলেছেন জনাথন বাখমেন, যিনি নিউ অরলিন্সের একজন আলোকচিত্রী এবং বেশ কয়েকবছর ধরে রয়টার্সের হয়ে কাজ করছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বাখমেনের ওই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। ব্যবহারকারীরা বলছেন, এই নারীর দাঁড়ানোর ভঙ্গি আর অভিব্যক্তিই আন্দোলনের মূল চেতনাকে সবার সামনে হাজির করেছে। বন্ধুরা জানাচ্ছেন, ছবির ওই নারীর নাম ইশা ইভানস; পেনসালভানিয়ায় নার্স হিসেবে কাজ করা ইশার পাঁচ বছর বয়সী একটি ছেলে আছে বলে তার ফেইসবুক একাউন্টের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ যুবক হত্যার প্রতিবাদে অংশ নিতে শনিবার ইশা লুইজিয়ানার বাটন রুজে যান বলে তার বাল্যকালের বন্ধু আন এলেক্স হায়নেস ফেইসবুকে জানিয়েছেন।
‘সে গিয়েছিল কারণ একসময় যেন ছেলের চোখে চোখ রেখে বলতে পারে, স্বাধীনতা আর অধিকারের জন্য সে লড়েছিল’, বলেন হায়নেস।
ইভানসের শান্ত, সৌম্য অথচ ঋজু প্রতিবাদের এ ছবি নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।
ছবিটি তোলা হয়েছে ব্যাটন রুজ পুলিশ হেডকোয়ার্টারের বাইরে, যেখানেই শনিবারের প্রতিবাদকারীরা একত্রিত হয়েছিলেন। ‘ব্যাটন রুজের এমন একটি আইকনিক ফটো এবং তার অসংখ্য প্রতিরূপ তুমি তোমার জীবনভর দেখতে পাবে’, সোমবার ছবিটি সম্বন্ধে এমনটাই মন্তব্য করেন ডেভিড ল নামে এক টুইটার ব্যবহারকারী। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘আটলান্টিক’ বলছে, বাটন রুজের এ ছবিকে ভোলা সহজ হবে না।
ওয়াশিংটন পোস্টের বক্তব্য, ‘ছবিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংকটকালীন মুহূর্তকে তুলে ধরেছে।’ এ বিষয়ে ইভানসের মন্তব্য নিতে পারেনি রয়টার্স।
মঙ্গলবার লুইজিয়ানার ব্যাটন রুজে ৩৭ বছর বয়সী অ্যাল্টন স্টের্লিংকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। পরে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে দুই পুলিশ সদস্য স্টের্লিংকে চেপে ধরে মাটিতে নামায় এবং গুলি চালায়।
অস্ত্রধারী এক ব্যক্তি হুমকি সৃষ্টি করছে এমন তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ স্টের্লিংকে ধরার চেষ্টা করে বলে প্রাথমিকভাবে দাবি করে পুলিশ। ঘটনার পরদিন থেকে নাগরিক অধিকার গ্রুপ ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ শহরজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার বিক্ষোভকারীরা বাটন রুজ পুলিশ হেডকোয়ার্টারের বাইরে এয়ার লাইনস হাইওয়ে বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করেছিল।
‘পুলিশ বারবার বিক্ষোভকারীদের হাইওয়ে থেকে সরে যেতে বলছিল, ওই হাইওয়েটাই প্রতিবাদকারীরা বন্ধ করে রেখেছিলৃপুলিশ অবশ্য পরে অধিকাংশ প্রতিবাদকারীকেই রাস্তার পাশে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল,’ বিবিসিকে এক ইমেইল বার্তায় সেদিনের ঘটনা বলছিলেন আলোকচিত্রী বাখমেন।
‘আমিও ছিলাম রাস্তার ধারে, যেখান থেকে প্রতিবাদকারীদের পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদের ছবি তুলছিলাম। হঠাৎ আমার ডান কাঁধের দিক থেকে এ নারীকে রাস্তায় উঠে যেতে দেখলাম। এরপর এক জায়গায় গিয়ে সে দাঁড়িয়ে পড়লো; সে কিছু বলছিল না, একবিন্দু নড়ছিলও না। দেখা যাচ্ছিল পরিস্কারভাবে যে পুলিশ তাকে আটক করতে যাচ্ছে।’ পরে ওই নারীকে আটক করার কথা জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্সও। ইশার ভাগ্যে কি ঘটেছে তা জানতে উদগ্রীব হয়ে পড়েছিল অনেকেই। পরে তাদের শঙ্কা দূর করে ইশা ফেইসবুকে লেখেন,‘বেঁচে ও নিরাপদে আছি।’
