‘আমারও মৃত্যু হতো’
মাসুদ আলম : আল্লাহ বাঁচাইছে, না হয় আমারও মৃত্যু হতো। আমি গরীব পরিবারের সন্তান। আমার মৃত্যু হলে স্ত্রী-সন্তানের কী হতো? আমি সাংবাদিকসহ সবাইকে বলেছি দোয়া করতে। যাকে দেখি তাকেই বলি দোয়া করতে। সুস্থ হতে আর কতদিন লাগবে আল্লাহই জানে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলশানে জঙ্গি হামলায় আহত গাড়ি চালক আব্দুর রাজ্জাক রানা এই প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর বেডে খালি গায়ে শুয়ে আছেন রাজ্জাক। তার পাশের বেডে শুয়ে আছেন ছোট ভাই আফজাল। ডাকাডাকির কিছুক্ষণ পর ঘুম ভাঙল তার। প্রথমে কথা বলতে না চাইলেও পরে সাংবাদিক পরিচয় শুনে কথা বলেন। এ সময় শরীরের ব্যথায় নড়াচড়া করতে পারছিলেন না রাজ্জাক। ব্যথার কারণেই তাকে সারাক্ষণ শুয়ে থাকতে হয় হাসপাতালের বিছানায়।
শুয়ে থেকেই রাজ্জাক জানান, সোহানুর রহমান নামে এক ব্যক্তির মাইক্রোবাস চালাতেন তিনি। ওই মাইক্রোবাসটি জাইকার বাংলাদেশে মেট্রোরেল প্রকল্পে ভাড়া দেন সোহানুর। গত ৯ জুন থেকে সেখানে তিনি ডিউটি করছেন। একেক সময় একেক এলাকায় তাকে ডিউটিতে যেতে হতো। ১ জুলাই রাত ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে চার জাপানিকে নিয়ে গুলশান আর্টিজান রেস্তোঁরায় যান তিনি। জাপানিরা রেস্তোরাঁয় প্রবেশের পর তিনি গাড়িটি রেস্তোরাঁর সামনে পার্কিং করে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। হঠাৎ রাত পৌনে ৯টার দিকে বিকট শব্দ শুনে মাটিতে লুটে পরেন রাজ্জাক। পরে তিনি দেখতে পান তার গলার বাম পাশে দিয়ে অনবরত রক্ত পরছে। রাজ্জাক এ সময় বুঝতে পারে যে তার গুলি লেগেছে। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই আবারও তার বাম হাতে আরেকটি গুলি লাগে। এছাড়া তার ‘হিপে’ তিনটি স্পিøন্টার বিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি অচেতন হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। পরে পুলিশ রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। তিনি বলেন, আট বছরের ছেলে রাব্বি ও স্ত্রীকে নিয়ে সাভারের হেমায়েতপুরে থাকতেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার বাঁশগাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম আজিজুর রহমান। তিন ভাইয়ের মধ্যে রাজ্জাক সবার বড়। তার উপার্জনের উপর নির্ভর ছিল বাবা- মা ও ভাইয়েরা। বাবা ও ছোটভাই আফজাল পেশায় কৃষক।
রাজ্জাকের ছোট ভাই আফজাল বলেন, ঈদের একদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়। সেই টাকা দিয়ে ঈদ ও রাজ্জাকের খরচ বহন করা হচ্ছে। একই রাতে হাসপাতালে ভর্তি দুই পুলিশ কনস্টেবল আলমগীর ও প্রদীপকেও এক লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। রাজ্জাক নিউরো সার্জারি বিভাগের ডা. আশরাফ উদ্দিন খানের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি