ঢাবি থেকে নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন তিনি পুলিশ জানে না জঙ্গি নেতা মহিউদ্দিন কোথায়
বিপ্লব বিশ্বাস : হিযবুত তাহরীরের প্রধান সমন্বয়ক মহীউদ্দীন আহমেদ নিষিদ্ধ হলেও থেমে নেই হিযবুত তাহরীর-এর কর্মকা-। সাম্প্রতিক সিরিয়াল টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনায় পুনরায় আলোচনায় উঠে এসেছে সংগঠনটি। পুলিশের দাবি, মাদারীপুরের কলেজ শিক্ষক হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার ও ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ফাহিম হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি হামলার পেছনে হিযবুত তাহরীর হাত থাকতে পারে ধারণা গোয়েন্দা পুলিশের। দলটির প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দীন আহমেদ উত্তরা থানার একটি মামলায় ২০১০ সালের ২০ এপ্রিল গ্রেফতার হলেও পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। ঢাবি থেকে তিনি নিয়মিত বেতনভাতাও পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। আত্মগোপনে থেকে মহিউদ্দীনই দলীয় কর্মীদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মহিউদ্দীন আহমেদ জামিনে মুক্ত হলেও তিনি তার কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যামিনিস্ট্রেশন (আইবিএ)-তে যোগদানের অনুমতি পাননি। তিনি এ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর সরকার হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকে মহিউদ্দীনকে আর কর্মস্থলে দেখা যায়নি। তিনি বর্তমানে কোথায় আছেন তাও জানেন না এ বিভাগের কেউই। তবে কর্মস্থলে যোগদানের অনুমতি চেয়ে মহিউদ্দীন আহমেদ আইবিএ-এর পরিচালকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। পরিচালক ওই চিঠিটি বিশ্ববিদ্যলয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠান বলে জানিয়েছেন আইবিএ-এর পরিচালকের সচিব মঞ্জুরুল হক।
ঢাবির রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, ‘সরকার হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর সিন্ডিকেটের একসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহিউদ্দীন আহমেদকে বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদান করা হয়। তাকে অধ্যাপনা থেকে বিরত রাখা হয়েছে। তবে তিনি নিয়মিত বেতনভাতা পাচ্ছেন। তার ছুটি এখনও বহাল আছে।’
ঢাবির উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘ওই শিক্ষক জামিনে রয়েছেন। তার মামলা যেহেতু চলমান, এ কারণে সিন্ডিকেট তাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়েছে।’
মহিউদ্দীন আহমেদ বর্তমানে কোথায় অবস্থান করছেন, অনুসন্ধান করেও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত গ্রামীণ ফোনের সিমটি বন্ধ পাওয়া যায়। গ্রিন রোডের টিচার্স কোয়ার্টারে তার পরিবারেরও হদিস পাওয়া যায়নি। এদিকে সরকার হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ করলেও থেমে নেই এর কার্যক্রম। রাজধানীসহ সারাদেশে সংগঠনটির কর্মীরা সক্রিয় রয়েছে। বছর দুয়েক ধরে হিযবুত তাহরীরের নারী সংগঠন কাজ করছে। বাড়ছে নারীকর্মী সংখ্যাও। দলের কর্মীদের দাবি, সব কটি বিভাগীয় শহরে তাদের সংগঠন রয়েছে। কোনো কর্মী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলে, কিংবা সংগঠনের যে কোনো খবর মিডিয়ায় প্রকাশের লক্ষ্যে কর্মীরা নিয়মিত গণমাধ্যম অফিসে গিয়ে হাতে হাতে প্রেসরিলিজ পৌঁছে দিচ্ছে। লন্ডন থেকেও মিডিয়া অফিসে ই-মেইলে প্রেসরিলিজ পাঠানো হয়।
সূত্র মতে, গ্রেফতারকৃত হিযবুতকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ বেশিরভাগই সন্ত্রাস দমন আইনে অভিযোগ আনে। হিযবুত তাহরীরের কর্মীদের কাছে আলামত হিসেবে লিফলেট, পোস্টার ও বইপত্র পাওয়া যায়। এ কারণে মামলাও হয়। তবে বেশিদিন তাদের আটক রাখা সম্ভব হয় না।
সংগঠনটির কর্মীদের দাবি, বর্তমানে রাজধানীতে ৫০ জন কর্মী কারাগারে রয়েছে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর তথ্য মতে, র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ১১ বছরে ১ হাজার ১০০ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে হিযবুত তাহরীরের কর্মীরাও রয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শুধু হিযবুতকর্মী সংখ্যা কত এবং জেলে কতজন আছে, সে সম্পর্কে র্যাবের কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। কারণ, একদিকে ধরা পড়ে আরেকদিকে তারা জামিনে বেরিয়ে যায়। হিযবুত তাহরীরের দাবি, ২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত তাদের তিন শতাধিক কর্মী আটক হয়েছে।
উল্লেখ্য, সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এসময় থেকে সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়কারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের আইবিএ-এর সহযোগী অধ্যাপক মহিউদ্দীন আহমেদকে পরিবারসহ তার গ্রিন রোডের বাসায় নজরবন্দি রাখা হয়। পরে উত্তরা থানার একটি মামলায় তাকে ২০১০ সালের ২০ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়। একই মামলায় ২১ এপ্রিল সংগঠনটির সেকেন্ড ইন কমান্ড সফ্ট ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কাজী মোরশেদুল হককে মোহাম্মদপুরস্থ চাঁন মিয়া হাউজিংয়ের বাসা থেকে আটক করা হয়। এছাড়া হিযবুত তাহরীরের উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলাকে ২০১০ সালের ৮ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশ এলিফ্যান্ট রোড থেকে গ্রেফতার করে। এদের সবার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরকে সংগঠিত ও কার্যকর করা এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। জানা গেছে, মোরশেদ এবং গোলাম মাওলা দুজনই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি