মোহাম্মদ আলী বোখারী ষ টরন্টো থেকে মিডিয়াকে অপরিহার্য মারণাস্ত্র বললেন ডা. জাকির নায়েক
পিস টিভি ভারত ও বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করায় উভয় দেশের গণমাধ্যমে বিষয়টি অতীব গুরুত্ব পেয়েছে। তারই প্রতিক্রিয়ায় ডা. জাকির নায়েক নিজের অফিসিয়াল ফেসবুকে নিশ্চুপ থাকেননি। তাতে তিনি বলেছেন, মিডিয়া হচ্ছে বিশ্বের সর্বাধিক অপরিহার্য মারণাস্ত্র। এটি একজন নায়ককে খলনায়ক তদ্রƒপ একজন খলনায়ককে নায়কে রূপান্তর করতে পারে। পাশাপাশি বলেছেন, টেলিভিশন চ্যানেল কিংবা প্রিন্ট মিডিয়ায় তিনি সাক্ষাৎকার প্রদানে আগ্রহী, তবে তা বিকৃতহীন অবিকল প্রচারিত হবে কিনা তাতে তিনি শঙ্কিত। তাই অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে তার বিরুদ্ধে আনীত মুখ্য অভিযোগগুলোর জবাব ভিডিওযোগে সামাজিক মিডিয়ায় দেবেন।
ওই বিবৃতিতে ডা. জাকির নায়েক বলেন, পহেলা জুলাই বাংলাদেশের ঢাকায় সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলায় যে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ আমার বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে, তাতে আমি ব্যথিত। টেলিভিশনে আমার যে ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়েছে, তা হয় অপ্রাসঙ্গিক বা খ-িত কিংবা অতিরঞ্জিত। তেমনিভাবে প্রিন্ট মিডিয়ায় মুদ্রিত আমার বক্তব্যের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
তিনি বলেন, আমি টেলিভিশন চ্যানেল কিংবা প্রিন্ট মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার প্রদানে আগ্রহী, তবে তা বিকৃতিহীন অবিকল প্রচারিত হবে কিনা সে বিষয়ে শঙ্কিত। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমার বক্তব্যকে বিকৃতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। অতীতে দেওয়া কয়েকটি সাক্ষাৎকারের পর আমি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, ওই সাক্ষাৎকারগুলোর অধিকাংশই টেলিভিশন চ্যানেল অথবা পত্রিকাগুলো দুঃখজনকভাবে কর্তিত অবস্থায় নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যবহার করেছে।
জাকির নায়েক বলেন, স্রষ্টার ইচ্ছায় আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আমার বিরুদ্ধে আনীত মুখ্য অভিযোগগুলোর জবাব ভিডিও বার্তায় দেব, যা গণমাধ্যমে প্রেরণসহ সামাজিক মাধ্যমেও প্রচারিত হবে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ভারত সরকারের কোনো একটি সংস্থা থেকেও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। আমি আনন্দের সঙ্গে ভারতীয় সরকারের তদন্ত সংস্থাকে নিজের যে কোনো তথ্য প্রদানের সহযোগিতায় আগ্রহী।
পরিশেষে ওই বিবৃতিতে তিনি সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে নিজের অবস্থানটিও পরিষ্কার করেন। এতে তিনি পুনরাবৃত্তিপূর্বক বলেন, আমি কোনো প্রকার সন্ত্রাসবাদ বা সহিংসতার সমর্থক নই। আমি বিশ্বব্যাপী জনসমক্ষে বক্তৃতাকালে বহুবার একথা বলেছি যে, আমি কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনকে সমর্থন করি না। কেউ আমার কোনো বক্তব্যকে যে কোনো পর্যায়ের সহিংসতায় ব্যবহার করলে, আমি তীব্রভাবে তার নিন্দা জানাই।
এর আগে ডা. জাকির নায়েক নিজের ফেসবুকে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে অপর এক বার্তায় জানিয়েছেন, এসব বিভ্রান্ত সন্ত্রাসীরা দাবি করেছে তারা আমার অনুসারী এবং একইভাবে বলেছে তারা কুরআনেরও অনুসারী। যৌক্তিকভাবেই তাদের ইসলাম বহির্ভূত কর্মের জন্য আমাকে কিংবা কুরআনকে দায়ী করা যাবে না, কেননা কুরআন কিংবা আমি নিরপরাধ মানুষের ক্ষেত্রে সহিংসতা ও হত্যার প্রচার করি না।
এছাড়াও গত ৮ জুলাই নিজের ফেসবুকে সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কা থেকে ‘আইএসআইএস কিলিং’ সংক্রান্ত এক ভিডিও বার্তায় ডা. জাকির নায়েক মিডিয়াকে নিয়ে অনুরূপ অভিমত তুলে ধরেন। সেখানে তিনি মুসলিম জাহানকে ‘আইএসআইএস’কে ‘এআইএসআইএস’ বা ‘অ্যান্টি ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া’ এবং ‘দায়েস’কে ‘দাঘায়েস’ বা ‘অ্যান্টি ইসলামিয়া’ বলে ডাকার আহবান রেখেছেন।
বলাবাহুল্য, ইসলাম প্রচারের নামে জাকির নায়েক তরুণদের বিপথগামী করছেন এবং কথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এ যোগ দিতে উৎসাহ জোগাচ্ছেন এমন অভিযোগ উঠায় বাংলাদেশে জাকির নায়েকের ‘পিস টিভি’-র সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। অনলাইনেও তা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। অপরদিকে, ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ভারতেও বন্ধ হয়েছে পিস টিভি-র সম্প্রচার। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, দেশে ফিরলে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হবে। আইএস সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠায় তাকে গ্রেফতারের সম্ভাবনাটিও দেখা দিয়েছে। তবে গুলশান হামলাকারীদের মধ্যে অন্তত দুজন জাকির নায়েককে অনুসরণ করত বলে অভিযোগ উঠায় এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জাকির নায়েককে নিহত রোহান ইমতিয়াজ ও নিবরাস ইসলাম অনুসরণ করত বলে অভিযোগ রয়েছে। রোহান গত বছর জাকির নায়েকের পিস টিভির একটি অনুষ্ঠান তার ফেসবুকে পোস্ট দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।