রিজার্ভ চুরি নিউ ইয়র্ক ফেডের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠক স্থগিত
হাসান আরিফ : বাংলাদেশের চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে করনীয় বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠকটি স্থগিত হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
স্থগিত হওয়া বৈঠকে চার সদস্যের বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল ডেপুটি গভর্নর ও ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ রাজি হাসানের। রিজার্ভের অর্থ চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার উদ্ধারে আগামী ১৫ জুলাই বৈঠকের তারিখ নির্ধারিত ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছে, আমরা নিউ ইয়র্ক ফেডের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি চলতি কিংবা পরের মাসের যেকোনো সময়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তাও বৈঠকটি স্থগিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে স্থগিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে কিছু জানাতে তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে ২০ মিলিয়ন ডলার গ্রাহকের নাম ভুল করায় শ্রীলঙ্কায় আটকে যায়, পরে তা ফেরত আনা হয়। বাকি ৮১ মিলিয়ন ডলার যায় ফিলিপাইনের একটি বেসরকারি ব্যাংকে। সেখান থেকে ক্যাসিনো হয়ে হংকংয়ে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। বাংলাদেশ মনে করে, এ ঘটনায় নিউ ইয়র্ক ফেড ও সুইফটের দায় রয়েছে। অন্যদিকে, সুইফট ও নিউ ইয়র্ক ফেড একাধিকবার বলেছে যে, তাদের কোনো দায় নেই। দুর্বলতা বাংলাদেশ ব্যাংকের।
নাম প্রকাশ না করে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় ফেড নিউ ইয়র্ক ও বেলজিয়ামভিত্তিক সুইফটেরও কিছু দায়দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, রিজার্ভের অর্থ স্থানান্তরে সুইফটের বার্তা ব্যবহার করে যে ৩৫টি আদেশ পাঠানো হয়েছিল, তার মধ্যে ৩০টি আদেশ আটকে দেওয়া হয়েছিল। যদি ৩০টি আদেশ আটকানো সম্ভব হয়, তবে অপর পাঁচটি আদেশ কেন আটকানো গেল না? তাই বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, এ ক্ষেত্রে ফেড নিউ ইয়র্ক তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারে না।
রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনাটি প্রথম জানাজানি হয় ফেব্রুয়ারির শেষে। ফিলিপাইনের দৈনিক ইনকোয়ারারে এ নিয়ে অনুসন্ধানী একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে মার্চের শুরুতে দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনায় আসে। এ ঘটনার দায় কাঁধে নিয়ে পদত্যাগে বাধ্য হন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান। দুজন ডেপুটি গভর্নরকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় গত ১৫ মার্চ রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডিকে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি