জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ঠাঁই হবে না
* মা-বাবাকে সজাগ থাকতে হবে * জঙ্গিবিরোধী সচেতনতা বাড়াতে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলাপর্যায়ে কমিটি * আমরা কখনও
চাই না বাংলাদেশ জঙ্গিদের হাতে জিম্মি হবে
দীপক চৌধুরী : গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার প্রেক্ষাপটে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে কোনোভাবেই জঙ্গিবাদের উত্থান হতে দেওয়া হবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাংলাদেশে কোনো জঙ্গিবাদের উত্থান হতে দেব না। বাংলাদেশ বা বাঙালি জাতি জঙ্গিদের জিম্মি হবে, এটাও আমরা চাই না।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ঠাঁই হবে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। কোনো জঙ্গির স্থান, সন্ত্রাসের স্থান বাংলাদেশে হবে না।
মঙ্গলবার গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি একথা জানান। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে চার বিভাগের ৩২টি জেলার প্রশাসক, মাঠপর্যায়ের প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, মসজিদের ইমাম, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়ের জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্তানদের বিষয়ে মা-বাবাকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েরা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, তার খোঁজখবর নেবেন। তাদের প্রতি খেয়াল রাখবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। কোনো জঙ্গির স্থান, সন্ত্রাসের স্থান বাংলাদেশে হবে না। কেউ যাচ্ছে কি না, কেউ নিচ্ছে কি না, দুটিই খুঁজে বের করতে হবে। কেউ বিপথে পাঠাতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা কোথায় নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে, তাদের বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে। আমরা উৎস খুঁজে বের করবো। জঙ্গি হামলায় উচ্চশিক্ষিতদের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা উচ্চশিক্ষিত, ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশোনা করছে, সেই ছেলে-মেয়েরা কীভাবে ধর্মান্ধ হয়ে যাচ্ছে, নিখোঁজ হয়ে যায় পরিবার থেকে? অথচ প্রশ্ন আসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর। এ নিয়ে রিপোর্ট দিতো মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এখন দেখা যায় অনেকে স্বেচ্ছায় গুম হয়ে এখন তারা এ ধরনের কাজ করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা ইসলামের নাম করে মানুষ হত্যা করছে, তারা আমাদের পবিত্র ধর্মের বদনাম করছে দেশে-বিদেশে। আমাদের ধর্মে আছে, মানুষের কল্যাণে কাজ করা। কিন্তু তারা রমজানে তারাবি না পড়ে, ঈদের দিন ঈদের নামাজ না পড়ে মানুষ মারছে, মানুষ হত্যা করছে। ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার কল্যাণে কাজ করতে চাই, এটাই আমাদের লক্ষ্য।
জঙ্গি দমনে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ঘটনা ঘটেছে। আমি চাই দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে বাংলাদেশ। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি আমরা।
সরকার দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের ফলেই এসব কাজ সম্ভব হচ্ছে। দেশবাসীও সমর্থন করছেন। জঙ্গিবিরোধী সচেতনতা বাড়াতে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলাপর্যায়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ আবার মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী তাগিদ দেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ সবাই যেন নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে সাধারণ মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করেন। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকরাও খোঁজ-খবর রাখবেন।
প্রত্যেক ইউনিয়ন, থানায় জঙ্গি এবং সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকা- চালানো হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ কমিটিগুলো কারও জঙ্গি সম্পৃক্ততা থাকলে তা খুঁজে বের করবে। কমিটির মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় উন্নত দেশ হিসেবে পরিণত করার লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো। এ লক্ষ্যে নানা প্রকল্প রয়েছে, সেখানে বিদেশিরা কাজ করেন। তাদের নিরাপত্তা জরুরি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও এলাকার মানুষ এক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করবেন। আমরা পারবÑ এ বিশ্বাস আমার আছে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সর্বস্তরের মানুষকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিশ্বাস, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিমুক্ত করতে পারব। সবাই একযোগে কাজ করলে সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিন করতে পারবে না। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ।
বিকাল ৫টায় প্রধানমন্ত্রী গণভবনে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একই ধরনের মতবিনিময় করবেন।