এখনই সময় প্রগতিশীলদের এক কাতারে দাঁড়ানোর
ওয়াসিম ফারুক
এবারের ঈদের আনন্দ ছিল অনেকটা নিস্তব্ধ। গুলশান আর শোলাকিয়ার রক্তের দাগ কলংকিত করেছে জাতিকে, বিশ্বের কাছে মাথানত করতে হলো সমগ্র জাতিকে। অনেকেরই যুক্তি এটাতো আর নতুন কিছু নয় সারা দুনিয়াই চলছে এমন তা-ব। এ কথা যারা বলবেন, তাদের যুক্তিকে অন্ধ, পঙ্গু যুক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করব। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই, অপশক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা পিছাতে চাই না, ধ্বংস হতে চাই না। নির্মম পরিহাস সময়ের বিবর্তনে আমরাও আজ অপশক্তির পাল্লায় পড়ে নিশ্চিত ধ্বংসের পথেই হাটছি।
দেশে ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদ তথা ধর্মীয় জঙ্গিবাদের জন্ম কবে তা বলা মুশকিল তবে এর উত্থান আশির দশকে। সেই আশির দশক থেকেই দেশের প্রগতিশীল কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ধর্মীয় উগ্রবাদ তথা ধর্মীয় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আসছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ধর্মীয় জঙ্গিবাদের হাতে নানাভাবে লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে প্রগতিশীলদের, এমন কি জীবন পর্যন্ত দিতে হয়েছে। নানান সময় ক্ষমতায় থাকা সরকারের কর্তাব্যক্তিরা কোনো সময়ই গুরুত্বের চোখে দেখেনি ধর্মীয় জঙ্গিবাদীদের এসব অপকর্ম বরং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য প্রত্যেক সরকারই এই ধর্মীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে লালনপালন করেছে এমন কি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার শরিক করে তাদের পুরস্কৃতও করেছে।
ক্ষমতাসীনরা সবসময়ই ধর্মীয় জঙ্গিবাদের বিষয় নিয়ে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আমাদের ক্ষমতায় থাকা সব সরকারই নিজের গা বাঁচিয়ে জঙ্গিবাদকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এতেই দেশে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ আজ ফুলে ফেঁপে কলাগাছ ।
১৯৯২ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আফগান ফেরৎ জঙ্গিরা হরকাতুল জিহাদ অর্থাৎ হুজি আত্মপ্রকাশ করে। তখন যদিও এসব জঙ্গিগোষ্ঠীর কর্যক্রম ছিল মাদ্রাসা বা ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক, সময়ের বিবর্তনে তা আজ ইংরেজি মাধ্যম স্কুলসহ নানা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এতিম অসহায় শিশুদের থেকে তা আজ ছড়িয়ে পড়েছে ধনীর দুলালের কাছে। ১৯৯৬ সালের ১৯ জানুয়ারি কক্সবাজারের উখিয়ায় হুজির ৪১ কর্মী সশস্ত্র অবস্থায় আটক হয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তাদের সবাই ছিল কোনো না কোনো মাদ্রাসার ছাত্র। আর ২০১৬ সালের গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় ও শোলাকিয়া ঈদের জামায়াতে হামলায় জড়িত হিসেবে নাম প্রকাশ পাচ্ছে উচ্চবিত্ত নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্তানদের।
প্রত্যেক সরকারই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স কথা বললেও সরকারের কথা ও কাজের মধ্যে থেকে যায় বিশাল ব্যবধান। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলাকারীদের একজন বগুড়ার শাজাহানপুরের খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল আমি যতটুকু জানি এই পায়েল ছাড়া বাকি সবাই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান এমন কি কারও কারও আবার রাজনৈতিক পরিবারের পরিচয়ও রয়েছে। হামলাকারীদের একজন নিবরাস ইসলাম চার মাস আগে তুরস্ক থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনজন সঙ্গীসহ গ্রেফতার হন আমাদের বিমানবন্দরে, এমন কি রোহান ইমতিয়াজও সে দলে ছিলেন কিন্তু ক্ষমতার দাপট বেশিদিন আটকে রাখতে পারেনি তাদের। এমন কি জঙ্গিবাদ ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিরোধিদের দমনেরও অভিযোগ আছে সরকারের বিরুদ্ধে। স্বাভাবিকভাবেই সরকারের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের অবস্থান নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়? জঙ্গিবাদের যে বীজ আমাদের দেশে রোপন করা হয়েছে তার মূল হয়তো কোনোভাবেই উৎপাটন করা সম্ভব নয় তবে দমন করা মোটেও অসম্ভব নয়। এর জন্য সরকারের সদিচ্ছার পাশাপাশি সকল রাজনৈতিক শক্তিকে আন্তরিক হতে হবে প্রগতিশীল সকল শক্তিকে দেশ ও দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে দাঁড়াতে হবে এক কাতারে। আজ দেশে ক্ষমতা কেন্দ্রিক যে রাজনীতির চর্চা শুরু হয়েছে এর থেকে সকল রাজনৈতিক শক্তিকে বেরিয়ে আসতে হবে।
লেখক : কলামিস্ট / সম্পাদনা : জব্বার হোসেন