হবিগঞ্জের মাছ যাচ্ছে ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যে
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হাওর অঞ্চলের একটি আদর্শ জেলা হবিগঞ্জ। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে দেশের শীর্ষে রয়েছে জেলাটি। তেমনি একটি কারণ মাছের প্রাচুর্য। হাওর অঞ্চল হওয়ায় এখানকার মানুষের প্রধান কাজ মাছ শিকার বা চাষ।
মাছ চাষ করে এখানকার লোকজন দেশের উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখছেন। কেউ লিজ নিয়ে, কেউবা নিজের পুকুরে মাছ চাষ করছেন। এখানকার অনেক লোক পুকুরে মাছ চাষ না করেও বিভিন্ন হাওর থেকে মাছ আহরণ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নিজেদের উন্নয়ন করছেন।
জেলার বানিয়াচং, আজমীরিগঞ্জ, লাখাই, নবীগঞ্জ উপজেলাতে বেশিরভাগ মানুষ মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত।
এই জেলায় রয়েছে খোয়াই, করাঙ্গী, বরাক, ভেড়ামোহনা, সুটকী, রতœা, বিজনা, কুশিয়ারা, ঝিংড়ি, সুতাংসহ বিভিন্ন নদী। আরও আছে অসংখ্য খাল-বিল, ডোবাসহ নানা প্রাকৃতিক জলাশয়। আর এ কারণেই এখানে বেশি পরিমাণে মাছ পাওয়া যায়। এখানকার জলাশয়গুলোতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো শৈল, গজার, শিং, পাবদা, রুই, কাতল, চিতল, টেংরা, চিংড়ি, বোয়াল, বাউস, আইড়, টাকি, বাইন, পুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, বাহরাইন, আবুধাবি এবং মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশে রফতানি হচ্ছে। দেশি মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এ জেলাতে অনেক অভয়াশ্রম করা হয়েছে।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, এ জেলায় জলাশয়ের পরিমাণ ৯৭ হাজার ১৩৫ হেক্টর। আর বছরে মাছ উৎপাদন হয় ২৮ হাজার ৪৭৪ টন। জেলায় মাছের চাহিদা ২২ হাজার ৯০৯ টন। উদ্ধৃত্ত ৫ হাজার ৫৬৫ টন। আর এই উদ্বৃত্ত মাছগুলো ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। স্থানীয় বাজারে মাছ ও দেশের বাইরে রফতানিকে কেন্দ্র করে জেলা সদরের উমেদনগর, চৌধুরীবাজার, শায়েস্তানগর, চুনারুঘাটের দুর্গাপুর, মাধবপুর বাজার, শায়েস্তাগঞ্জ সুতাং বাজার, আজমিরীগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে দেড় শতাধিক আড়ত গড়ে উঠেছে।
জেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন আহাম্মদ দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এখানের মিঠা পানির মাছ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। দিন দিন মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি জানান, এখানকার দেশীয় মাছ প্রাকৃতিক জলাশয়ে উৎপাদন হয়। প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছকে কৃত্রিম খাবার দিতে হয় না। তবে জেলার নানা স্থানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা মৎস্য খামারে খাবার দিতে হয়। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রতœা নদীতে একটি, বানিয়াচংয়ের রতœা নদীতে একটি, নবীগঞ্জের কসবা ফেরি নদীতে একটি করে মৎস্য অভয়াশ্রম করেছে মৎস্য বিভাগ।
শহরের উমেদনগর এলাকায় অবস্থিত আসকর ফিশ মার্কেটের মাছের আড়তের মালিক মো. সরাজ মিয়া দ্য রিপোর্টকে জানান, এ মার্কেটে শতাধিক আড়ত রয়েছে। হাওর অঞ্চলের মানুষ জলাশয় থেকে মাছ সংগ্রহ করে এখানে বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসেন। এখানে স্থানীয়ভাবে বিক্রি করে অতিরিক্ত থাকা মাছ সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং কিশোরগঞ্জের আড়তে পাঠানো হচ্ছে। আর সেখান থেকে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রফতানি করা হয়।
মাছ কিনকে আসা দিপংকর চৌধুরী দ্য রিপোর্টকে জানান, পুকুরে চাষ করা মাছের চাইতে জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে বড় হওয়া মাছ খেতে অনেক সুস্বাদু। তাছাড়া হাওর থেকে শিকার করা মাছে কোনো ধরনের ফরমালিন প্রয়োগ করা হয় না।
মাছ বিক্রি করতে আসা বানিয়াচঙ্গের দীলিপ দাস দ্য রিপোর্টকে জানান, আমরা সারা বর্ষা মৌসুমে মাছ শিকার করি। আর এ থেকে আমাদের সংসার চলে।
তিনি বলেন, আমরা দুই ভাই প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২শ টাকার মাছ বিক্রি করতে পারি। সারা বছর এখানে মাছ পাওয়া গেলেও বর্ষা মৌসুমে অনেক বেশি পাওয়া যায় বলেও তিনি জানান।