আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইতালির দক্ষিণাঞ্চলের পুগলিয়ায় মঙ্গলবার দুটি যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে অন্তত বাইশ জন নিহত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটিই দেশটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা। জরুরি বিভাগের উদ্ধারকর্মীরা ট্রেন দুটির ধ্বংসস্তুপের মধ্যে আটকে পড়াদের উদ্ধারে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাসস
ট্রেন দুটি একই রেললাইনের দুই দিক দিয়ে আসছিল। তাই ট্রেন দুটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। আন্দ্রিয়া শহরের কাছে জলপাই বাগানের মধ্যদিয়ে রেললাইনটি চলে গেছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী এই ঘটনাকে ‘ভয়াবহ দৃশ্য’ হিসেবে বর্ণনা করেন। সেখানকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (১০৪ডিগ্রি ফারেনহাইটে) পৌঁছেছে। উদ্ধাকাজে ২০০ উদ্ধারকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। এক পুলিশ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মানুষের মৃতদেহ দেখেছি। অন্যান্যরা সাহায্য চাইছিল, মানুষ কাঁদছিল। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ দৃশ্য।’ রেল পুলিশের আঞ্চলিক প্রধান জিয়ানকার্লো কোনটিচ্চিও বলেন, দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত ও ৪৩ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ধ্বংসস্তুপের মধ্যে আটকে পড়াদের সন্ধানে রাতভর তল্লাশী অভিযান চালিয়ে যাব।’ তবে ইতালির গণ্যমাধ্যম জানিয়েছে, এই ঘটনায় ২৩ জন প্রাণ হারিয়েছে। নিহতদের মধ্যে এক মা ও শিশুও রয়েছে। তারা মৃত্যুর সময় পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেছিল। তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, অন্তত একটি ট্রেন খুব দ্রুত চলছিল। মানব সৃষ্ট ভুলের কারণেই সম্ভবত দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। একজন ট্রেন চালক নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কোরাতোর মেয়র মাসিমো মাজ্জিলি ফেসবুকে বলেন, ‘এটা বিমান দুর্ঘটনার মতই একটি বিপর্যয়।’
স্থানীয় সাংবাদিক লুসিয়া অলিভিয়েরি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত ভয়ংকর একটি ঘটনা।’ এক বয়স্ক নারী স্থানীয় টিভি চ্যানেল টেলিসভেভাকে বলেন, ‘সেখানে মানুষের ছিন্ন ভিন্ন দেহের অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল।’
বেসরকারি রেল কোম্পানি পেরোতরামভিয়ারিয়া ট্রেন দুটিকে পরিচালিত করত।
প্রধানমন্ত্রী ম্যাত্তেও রেঞ্জি বলেন, ‘এটা দুঃখের সময় এবং এই ঘটনায় সঠিক কারণ না জানা পর্যন্ত আমরা তদন্ত চালিয়ে যাব।’ পোপ ফ্রান্সিস এই মর্মান্তিক ঘটনায় নিহতদের জন প্রার্থনা করেছেন।’ এই দুঃসময়ে ফ্রান্স ও রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শোক বার্তা পাঠিয়ে ইতালীয়দের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে।
একটি ট্রেনের অনেক যাত্রীই ছিল শিক্ষার্থী। তারা ইউনিভার্সিটি অব বারি অথবা বারি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাচ্ছিল। ক্রাইসিস ইউনিট জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে কয়েকজন বিদেশী নাগরিক রয়েছে। ২০০৯ সালে ইতালিতে সর্বশেষ বড় ধরনের ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। ভিয়ারেজ্জিওতে ওই দুর্ঘটনায় ২৯ জন প্রাণ হারায়।