
ওমানে ‘আধুনিক দাসপ্রথা’র শিকার বাংলাদেশি গৃহকর্মীরা!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হাজার হাজার গৃহকর্মী বন্দি রয়েছেন ওমানেবাংলাদেশ থেকে কাজের সন্ধানে ওমানে যাওয়া গৃহকর্মীরা ‘দাসপ্রথা’র মতো অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)-এর এক প্রতিবেদনে এই আধুনিক দাসপ্রথার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।
বুধবার (১৩ জুলাই) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ওমানে ১ লাখ ৩০ হাজার বিদেশি শ্রমিক রয়েছেন। ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ইথিওপিয়াসহ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে নারী গৃহকর্মীরা উন্নত জীবনের আশায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যান। তাদের মধ্যে কিছু কর্মী বাস্তবে একটি ভালো কাজের সন্ধান পেলেও বাকিরা চরম অমানবিক অবস্থায় কাজ করতে বাধ্য হন। এইচআরডব্লিউ
জানা গেছে, ওমানের কাফালা পদ্ধতির কারণে অভিবাসী শ্রমিকদের হয়রানির সুযোগ পেয়ে যান মালিকরা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ওমানে বিবিধ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অনেক বিদেশি গৃহকর্মীরা। ওমানের অনেক বাড়িতে বিদেশি গৃহকর্মীরা বন্দি রয়েছেন। দাসত্ব, যৌন নির্যাতন, মারধর, বেতন না দেয়ার মতো অনেক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা।
২০১৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশি গৃহকর্মী আসমা জানান, তিনি প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসেন। কিন্তু তার রিক্রুটিং এজেন্ট তাকে একজন ওমানি ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন, যিনি তার পাসপোর্ট আটকে রেখে ওমানে নিয়ে যায়। সেখানে তার বাড়িতে দিনে ২১ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করা হতো, ঠিক মতো খাবার দেয়া হতো না এবং যৌন হয়রানি করা হতো এবং তাকে একটাকাও বেতন দেয়া হয়নি। ওই ব্যক্তি আসমাকে বলেছিলেন, আমি তোমাকে ১ হাজার ৫৬০ রিয়েল (৪ হাজার ৫২ ডলার) দিয়ে কিনেছি। এখান থেকে মুক্তি চাইলে সেই টাকা আমাকে দিতে হবে।’ আরেক বাংলাদেশি গৃহকর্মী বাবলি জনিয়েছেন, তাকে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তার কোনও সাপ্তাহিক বন্ধ ছিল না। বসার সময় পর্যন্ত ছিল না। তিনি যে বাড়িতে কাজ করতেন, সেখানকার মালিক সবসময় তাকে গালাগালি করতো। পারভীন জানিয়েছেন, ওমানের বন্দরনগরী সোহারে কাজ করতেন তিনি। তিনি সেখানে ১৬ মাস কাজ করেছেন। প্রতিদিন ভোর ৪টা থেকে মধ্যরাত অবদি কাজ করতে হতো তাকে। আর এজন্য তাকে প্রতিমাসে মাত্র ৫০ ওমানি রিয়েল (১৩০ ডলার) দেওয়া হতো। অপর এক বাংলাদেশি গৃহকর্মী মমতা জানান, তিনি যে বাড়িতে কাজ করতেন সেখানকার মালিক তাকে মারতেন। তিনি পুলিশের কাছেও এ বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাকে আবার ওই মহিলার কাছে ফেরত পাঠিয়েছিল। এরপর তাকে তালাবদ্ধ করে রাখতেন ওই মহিলা। একবার তাকে আটদিন ধরে একটি রুমে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। তখন তাকে খেজুর পাতা এবং পানি ছাড়া আর কিছু খেতে দেওয়া হয়নি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আসমা-বাবলির মতো ৫৯ জন অভিবাসী গৃহকর্মীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে।
এদের অনেকেই বলেছেন, তাদের পাচার করে বা জোর করে কাজে বাধ্য করা হচ্ছে। তাদের কর্মক্ষেত্রের মালিকরাও বলেছেন, তাদের তারা কিনে নিয়েছেন।ওই প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য ওমান কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছে।
