হাসনাত ও তাহমিদের বিষয়ে যে কারণে গোপনীয়তা
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় প্রকৌশলী হাসনাত করিম ও কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদের ব্যাপারে গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে। আপাতত তাদের ব্যাপারে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকেও কোনো কিছু বলা হচ্ছে না। তবে তাদের দুজনের দিকেই সন্দেহের তীর রয়েছে। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, হাসনাত ও তাহমিদ জিম্মিদশায় রেস্তোরাঁর ভেতরে যেসব কর্মকা- করেছেন তা সন্দেহজনক। তারা জঙ্গিদের সহায়তা করেছেন বলেও বিভিন্নভাবে জানা গেছে। হাসনাতের ব্যাপারে সন্দেহ হচ্ছে তিনি ওই দিন পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই পুরো পরিবার নিয়ে রেস্তোরাঁটিতে গিয়েছিলেন। জিম্মিদশার কথা জানিয়ে তিনিই প্রথম তার চাচার কাছে বার্তা পাঠান। গোয়েন্দাদের সন্দেহ তিনি আগে থেকেই এই ঘটনা সম্পর্কে জানতেন এবং এটা প্রচার করতে হবে এমন দায়িত্ব তার ছিল।
হামলার পরদিন ওই রেস্তোরাঁ থেকে জীবিত জিম্মিরা বের হয়ে আসে। জঙ্গিরা নাকি তাদের সঙ্গে অনেক ভালো আচরণ করেছে। তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রশ্ন, তাহলে তারা ঘটনার পরপরই বাইরে বের হয়ে আসলেন না কেন? সারারাত সেখানে জঙ্গিদের সঙ্গে ছিলেন, তাদের দেওয়া খাবারও খেয়েছেন। আবার সকালে জঙ্গিদের সঙ্গে হাসনাতকে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে তার আচার-আচরণ নিয়ে নানা সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
সূত্র জানায়, হাসনাত করিম ও তার স্ত্রী জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পেয়ে বাইরে এসে সেখানকার ঘটনা বর্ণনা করেন। কিন্তু তার বর্ণনা মিথ্যে হতে পারে এমন সন্দেহ করছে গোয়েন্দা ও তদন্ত কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, তার সন্তানের জন্মদিন উপলক্ষে সেদিন তারা ওই রেস্টুরেন্টে যান। তদন্ত কর্মকর্তারা এখন হাসনাতের সন্তানের জন্মদিনের বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাইছেন। আর সেদিন জন্মদিন থাকলেও তারা পরিকল্পিতভাবে রেস্টুরেন্ট গিয়েছিলেন কিনা- তাও দেখা হবে।
সূত্র জানায়, হাসনাত ঘটনার দিন ভেতরে ছিলেন। ভেতরে যারা ছিলেন তাদের কম বেশি সবারই কিছু না কিছু ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু হাসনাত ও তার পরিবারের কারও কোনো ক্ষতি হয়নি।
হাসনাতের ব্যাপারে এর আগে থেকেই নানা তথ্য ছিল। ওই সব তথ্যও মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। তার সঙ্গে তাহমিদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে জানা গেছে। তারা একই যোগসূত্রে কাজ করে থাকতে পারেন বলেও ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। তাহমিদের ব্যাপারেও নানা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঘটনার ঠিক আগের দিন তার দেশে আসা, রেস্টেুরেন্ট যাওয়ার বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, তারা ঘটনায় জড়িত থাকার ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য স্বীকার করেনি। দুজনই বলেছে, জঙ্গিরা তাদের প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে বলে যদি তারা তাদের সহায়তা না করে তাহলে তাদের হত্যা করা হবে। আত্মরক্ষার্থেই তারা জঙ্গিদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেছে। জঙ্গিরা যা বলেছে সেটা শুনেছে।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, হাসনাত ও তাহমিদের ব্যাপারে যতক্ষণ পর্যন্ত সন্দেহ দূর না হচ্ছে ও তারা প্রমাণ করতে না পারছেন এই ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা নেই ততক্ষণ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখেই থাকতে হবে। যদি তারা গোয়েন্দা কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আছে সেটা বলা হয় তাহলে তাদের পরিবার আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। তার সুযোগ যাতে না পান সেজন্য তাদের ব্যাপারে এখন আর কোনো কিছুই বলা হচ্ছে না।
আর একবার যদি তাদের সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয় বা গ্রেফতার করা হয় তাহলে তাদের ২৪ ঘণ্টার বেশি আটক রাখা সম্ভব হবে না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থিত করতে হবে। সেখানে নেওয়ার পর আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন জানাতে হবে। সেই ক্ষেত্রে রিমান্ড মিলতেও পারে আবার নাও মিলতে পারে। এই কারণে কোনো ঝুঁিক নিতে চাইছে না সংশ্লিষ্টরা। এই কারণে তাদের ব্যাপারে এখন আর কোনো কথা বলা হচ্ছে না। পুলিশ বলছে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের দুজনের পরিবারই বলছে এখনো তারা বাসায় ফিরেনি। সূত্র জানায়, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হতে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি