গাওয়া হয় না জাতীয় সঙ্গীত! বরিশালের পিস স্কুল চলে জামায়াতের ফর্মুলায়
শামীম আহমেদ, বরিশাল : এক গুলিতে দুই পাখি শিকার করছে বরিশালের পিস স্কুল এন্ড কলেজ। মাত্র একবছর আগে নগরীতে কার্যক্রম শুরু করার সময় ঘোষণা দিয়েছিল ইসলামী বক্তা (বর্তমানে বির্তকিত) ড. জাকির নায়েকের ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধায়নে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হবে। যেহেতু বিভিন্ন মাধ্যমে জাকির নায়েক জনপ্রিয় হওয়ায় অল্পদিনে এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এ স্কুলে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। বর্তমানে জাকির নায়েকের বুদ্ধিবৃত্তিক জঙ্গিবাদ প্রচার ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর কথা ঘুরিয়ে নিয়েছেন বরিশালের পিস স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। পিস স্কুল কমিটির নেতৃবৃন্দরা বলছেন, এ স্কুলের সঙ্গে জাকির নায়েকের ফাউন্ডেশনের কোন সস্পৃক্ততা নেই। তাহলে পিস স্কুল পরিচালনা করছেন কারা? এমন প্রশ্নের সমাধান খুঁজতে গিয়ে বেড়িয়ে এসেছে নানা তথ্য।
জানা গেছে, সরাসরি জামায়াত ইসলাম পরিচালনা করছে পিস স্কুল এন্ড কলেজ বরিশাল শাখা। ইনভাইট পিস নামক একটি কোম্পানি স্কুলটি পরিচালনা করছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, পিস স্কুল এন্ড কলেজের পাঠক্রম অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের চেয়ে আলাদা। এমনকি বোর্ডের পাঠক্রমের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এখানে সরকার স্বীকৃত পাঠক্রম প্রচারণায় ব্যবহৃত হলেও মূলত ‘জামায়াতি পাঠ্যক্রম’ অনুসারে পরিচালিত হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছে, বইতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমনই লেখা থাকুক না কেন, শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকরা ভিন্নভাবে তা ব্যখ্যা করে থাকেন। এখানে কখনো জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয় না। তবে ইসলামি শিক্ষার নামে বিভিন্ন যুদ্ধের চুম্বুকাংশ প্রায় প্রতিদিন শিশুদের মাঝে বাধ্যতামূলক ‘বয়ান’ দেয়া হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা জামায়াতের একটা কৌশল। ইসলামি শিক্ষার নামে যুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে ছোট থেকেই শিশুদের মনে ‘জিহাদি’ হবার প্রবণতা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের মতে, জামায়াত ও জাকির নায়েকের ‘টার্গেট’ খুব বেশি আলাদা নয়। যেহেতু বিশ্বে জাকির নায়েক জনপ্রিয় এবং তার টেলিভিশনের নাম পিস টিভি তাই সেই নাম ব্যবহার করে সুযোগ নিয়েছে জামায়াত। এমন ধারণার সত্যতাও পাওয়া গেছে। পিস স্কুল পরিচালনা করে যে প্রতিষ্ঠান (ইনভাইট পিস লিমিটেড) তার চেয়ারম্যান আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ। নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ শিবিরের ১১তম সভাপতি। তিনি ১৯৯১-৯২ সেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। তাকে বিভিন্ন সময় ছাত্র শিবিরের অনুষ্ঠানেও দেখা গেছে। ছাত্র শিবিরের মুখপত্র ছাত্র সংবাদেও নিয়মিত তিনি লেখালেখি করেন। তবে এই বিষয়টি কয়েকদিন পূর্বে গণমাধ্যমে আলোচিত হলে তাকে সরিয়ে নতুন চেয়ারম্যান করা হয় জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিদ্যা বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর মীর আকরামুজ্জামানকে। জানা গেছে, আকরামুজ্জামানের সঙ্গে জামায়াতের প্রত্যক্ষ কানেকশন থাকার অভিযোগে এর আগে দুইবার তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। তবে ওই দুই দফায় লিখিত মুচলেকা দিয়ে তিনি জামায়াতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ বন্ধ করে স্বপদে বহাল হন।
জানা গেছে, বরিশালের পিস স্কুল এন্ড কলেজে ভাষা হিসেবে বাংলা, ইংরেজী ও আরবি শিখানো হয়। শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের ইংরেজী ও আরবি শিক্ষার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়ে শেখানো হয়। এমনকি ইংরেজী বা আরবি শেখাতে গিয়ে সা¯প্রতিক সময়ে ইরাক, ইরান, সিরিয়া বা আফগানিস্তানে তালেবান এবং আইএসএস-এর যোদ্ধাদের মানুষ হত্যার গল্প ‘লেসন স্পিড’ হিসেবে পড়ানো হয়।
স্কুলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, স্কুলটি জামায়াতের পরিচালনা কমিটি দিয়ে চললেও জাকির নায়েকের লেকচারের নির্বাচিত অংশ পাঠ্য হিসেবে পড়ানো হয়ে থাকে। যে অংশের মধ্যে অনেক মতামত আছে যা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সূত্রমতে, নগরীর ৪৭ কলেজ এভিনিউয়ের জিমি কটেজ ভাড়া নিয়ে স্কুল এন্ড কলেজটি পরিচালিত হলেও নির্দিষ্ট লোকের বাইরে কেউ এ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেন না। সূত্রটি আরও জানিয়েছেন, বরিশালে জামায়াতের যোদ্ধা তৈরীর আঁতুরঘর হিসেবে স্কুল এন্ড কলেজটি কাজ করছে। প্রতিসপ্তাহে এখানে বিশেষ সভা বসে। যেটিকে বাইরে প্রচার করা হয়ে থাকে স্কুল এন্ড কলেজ কমিটির সভা। সভায় যারা যোগদান করেন তারা বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চলের শীর্ষ জামায়াত নেতা। নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, স্কুলে ২১ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৯ জনই জামায়াতের সমর্থক। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা