যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থেরেসা মে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ১৯৭৯ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা ‘লৌহমানবী’ মার্গারেট থ্যাচারের পর মে যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় নারী সরকার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নিচ্ছেন, যাকে টালমাটাল এক সময়ে দেশের হাল ধরতে হলো। মঙ্গলবার ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটের এক বিবৃতিতে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বুধবার সন্ধ্যায়ই যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে বলে জানান। গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ডেভিড ক্যামেরন ল-নের স্থানীয় সময় বিকাল পাঁচটায় (বাংলাদেশ সময় গত রাত ১১টা) রানির সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। এরপরই থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব বুঝে নেবেন এবং দিন শেষে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের বাসভবনে যাবেন। বিডিনিউজ
যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) থাকার পক্ষে থাকলেও ৫৯ বছর বয়সী এই নারীকে ঠিক উল্টো কাজটিই করতে হবে। ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দিয়ে সরকার গঠন করতে হবে তাকে। বিভক্ত জাতিতে ফিরিয়ে আনতে হবে একতাও।
গত ২৩ জুনের গণভোটে ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় আসার পরপরই পদত্যাগের ঘোষণা দেন ক্যামেরন। অক্টোবরে তার চূড়ান্তভাবে ইস্তফা দেওয়ার কথা থাকলেও শিগগিরই নতুন নেতা নির্বাচন হয়ে যাওয়ায় ক্যামেরন গতকাল বুধবারই বিদায় নিয়েছেন। থেরেসা মেকে প্রধানমন্ত্রী পদে একজন ‘বলিষ্ঠ’ এবং ‘দক্ষ’ নেতা হিসাবে প্রশংসা করেছেন ক্যামেরন। যুক্তরাজ্যের আগামী দিনগুলোতে যে নেতৃত্ব প্রয়োজন তা অনেক ভালোভাবেই মে চালিয়ে নিতে পারবেন বলে তিনি আস্থা প্রকাশ করেন। গণভোটের হতাশাজনক ফলের পর ক্যামেরনের পদত্যাগ এবং প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টিতে বিশৃঙ্খলায় যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে গভীর রাজনৈতিক সংকটে পতিত হয়েছে।
আর তাই ‘ব্রেক্সিট’ অর্থাৎ, ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর কাজই শুধু নয়, পার্টি বিভাজন দূর করা এবং জাতিকে একতাবদ্ধ করার দায়িত্বটিও মে’র উপরই বর্তাচ্ছে।
নিজের সম্পর্কে থেরেসা মে : দ্বিতীয় নারী হিসেবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হওয়া থেরেসা মে’র নিজের সম্পর্কে মূল্যায়ন হল- রাজনীতিবিদ হিসেবে ‘আকর্ষণীয়’ কোনো ব্যক্তিত্ব তিনি নন। নিজের মূল্যায়নে তিনি যেমনই হোন, পুরো বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে তার দিকে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যকে বের করে নিয়ে দেশকে তিনি কোন পথে নিয়ে যান, তাই দেখার অপেক্ষা এখন। ধর্মযাজক বাবার কন্যা থেরেসা মে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল বিষয়ে পড়া শেষ করে পেশা জীবনের শুরুতে ছিলেন ব্যাংকার। ১৯৯৭ সালে পশ্চিম লন্ডনের মেইডেনহেডে আইনজীবী হিসাবে কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের ফিনানশিয়াল কনসালটেন্ট। ২০০২ সালে কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান হন মে। দলটিকে মানুষ ‘বাজে একটি দল হিসাবে দেখে’ দলীয় সম্মেলনে এমন মন্তব্য করে সে সময় আলোচনায় আসেন তিনি। ২০১০ সালে পান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব।
কেবল নিজের সম্পর্কে নয়, ব্রেক্সিট, ব্রিটেনের অর্থনীতি, বাণিজ্য, বাজার ব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা- বিভিন্ন বিষয়ে মে’র ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে গত কয়েকদিনে তার বিভিন্ন বক্তব্যে।
* ব্রেক্সিট : ব্রেক্সিট মানে ব্রেক্সিটই। আমি মনে করি না এখন জনগণকে ব্রেক্সিটের পক্ষে-বিপক্ষের হিসাবে দেখা উচিত। আমাদের এখন ইইউ থেকে ভালোভাবে বের হয়ে আসার কাজটি করতে হবে এবং আমি নিশ্চিত আমি সেটা করতে পারব।
* বাণিজ্য : আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সঠিক বিষয়ে আলোচনা করা এবং সঠিক বিষয় হচ্ছে (ইউরোপীয়দের) মুক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু আমাদের বাণিজ্য, পণ্য রপ্তানি এবং সেবার বিষয়েও সঠিক আলোচনা নিশ্চিত করতে হবে।
* অর্থনীতি : অর্থনীতিকে অনিশ্চয়তা থেকে বের করে আনা, শক্তিশালী করা, উৎপাদনের দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান, ভালো বেতনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ইইউ থেকে বেরিয়ে আসতে ব্রিটেনের পক্ষ থেকে কার্যকর শর্ত আরোপ এবং বিশ্বে ব্রিটেনের নতুন ভূমিকা তুলে ধরার পরিকল্পনাগুলো আমি আগামী দিনগুলোতে ঠিক করব।
* প্রতিরক্ষা : কানজারভেটিভ দল সরকার হিসাবে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপর জোর দেবে।…বিশেষ করে এখানে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
* করপোরেট গভর্নেন্স : আমরা পুরো ব্যবস্থাই বদলে দেব। আমরা কোম্পানির পর্ষদে শুধু ভোক্তাদেরই রাখব না, সেখানে কর্মীরাও থাকবেন।
* কর : …প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আমি ব্যক্তি খাতের এবং করপোরেট কর খেলাপিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাব।
টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মেকে দিনে দুইবার ইনসুলিন নিতে হয়। নিজেকে একজন ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান মনে করা মে অবশ্য ব্যক্তিগত জীবনকে ‘ব্যক্তিগত’ মোড়কেই রাখতে বেশি পছন্দ করেন।
এ প্রসঙ্গে তার মন্তব্য- ‘আমি আমরা ব্যক্তিগত জীবনকে ব্যক্তিগতই রাখতে পছন্দ করি। আমাদের সন্তান নেই, এটা আমরা মেনে নিয়েছি। আশা করি কেউ এটিকে গুরুত্বপূর্ণ ভাববেন না। আমি সহানুভূতিশীল, অন্যকে বুঝতে পারি এবং সততা ও সুযোগের ব্যাপারে সচেতন।’ সম্পাদনা : পরাগ মাঝি