আরও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা প্রধানমন্ত্রীর ‘দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে’
দীপক চৌধুরী : জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসীরা দেশে আরও হামলার পরিকল্পনা করছে এমন আশঙ্কা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
গণভবন থেকে গতকাল বুধবার কয়েকটি জেলার সরকারি প্রশাসন ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এসব ‘পরিকল্পিত জঙ্গি হামলার’ সঙ্গে যুদ্ধাপরাধী সংশ্লিষ্টদের যোগসূত্রের কথা বলেন এবং এসব হামলায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী জোটের সম্পৃক্ততার সম্ভাবনার কথাও জানান। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধ সচেতনতা গড়ে তুলতে তার নেওয়া উদ্যোগের অংশ হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুরসহ ১৫ জেলার সরকারি কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সমাজকর্মী, এনজিওকর্মী, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, এটাও মনে রাখতে হবে যে, এটা আর এখানেই থামবে না। নানা ধরনের পরিকল্পনা আছে। আমরা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জায়গা থেকে নানারকম তথ্য সংগ্রহ করে যাচ্ছি। পহেলা জুলাই গুলশানের একটি খাবারের দোকানে একদল সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যা করে। এক সপ্তাহের মাথায় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জমায়েতের কাছে জঙ্গি হামলায় দুই পুলিশ সদস্য নিহত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালের তিনটি মাস যেভাবে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সহযোগীরা মিলে সারাদেশে অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার মতো জঘন্য কার্যক্রম করতে পেরেছিল তারা কিন্তু থেমে থাকবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ যখন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সারা বিশ্বে উজ্জ্বল, যখন আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি, সেই সময় এ ঘটনা ঘটিয়ে দেশের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করা, উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা, দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়ার একটা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন করতে হবে, বাংলাদেশকে এ সন্ত্রাসী কর্মকা- থেকে মুক্ত করতে হবে, মানুষের জীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার শান্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমি মনে করি আমাদের মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ ধর্মীয় নেতারা, শিক্ষকরা, অভিভাবকরা, প্রশাসনে যারা কর্মরত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার-ভিডিপি, জনপ্রতিনিধিরা আছেনÑ ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা, মহানগর, জেলা ও সংসদ সদস্য এবং সমাজসেবক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার যারা আছেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এ জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদীগোষ্ঠী প্রকৃত অর্থে ইসলাম ধর্মেরই ক্ষতিসাধন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন মানুষের কল্যাণ হচ্ছে, মানুষের মধ্যে একটা স্বস্তি ফিরে এসেছে, আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছেÑ ঠিক সে সময় এ ঘটনাটা ঘটিয়ে সমগ্র বিশ্বের সামনে যেমন আমাদের হেয় করছে; সেই সঙ্গে আমি মনে করি, মুসলমান হয়ে মুসলমানকে হত্যা করে এ পবিত্র ইসলাম ধর্মকেই আজকে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। আমাদের এই পবিত্র ধর্মকে কেউ হেয় করবে, এটা আমরা বরদাশত করব না। প্রধানমন্ত্রী পিতা-মাতা, অভিভাবকদের নিজেদের সন্তানদের প্রতি যতœবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জঙ্গিবাদ দমনে সবার সম্মিলিত প্রয়াসের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক এলাকায় জঙ্গিবাদবিরোধী কমিটি, কোর কমিটি গঠন করে আড়ালে-আবডালে ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গি, নিখোঁজ ব্যক্তি এবং গোপন তৎপরতাকে খুঁজে বের করতে সবাইকে তৎপর হতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার মাধ্যমে আমাদের জাতি, ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে একজোট হয়ে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় এবং উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে যেতে হবে। এ সময় তিনি ঈদের জামাতে হিন্দু ভলান্টিয়ারদের নিরাপত্তাপ্রহরা দেওয়ার দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে এটাকেই সব ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে আবহমান বাংলার চিরায়ত রূপ এবং এই দেশ সাংবিধানিকভাবেই সব ধর্মাবলম্বীর আবাসস্থল বলেও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়েও সবাইকে সতর্ক করে দেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এবং তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. আবুল কালাম আজাদ।
চট্টগ্রাম থেকে প্রতিনিধি এম. ইউছুপ রেজা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. রুহুল আমীন, জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিক আহমেদ, সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার, পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার, খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মজিদ মিয়া, চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যলয়ের উপাচার্য, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।