আরেক আসামীর স্বীকারোক্তি
আজাদ হোসেন সুমন : চাঞ্চল্যকর পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যামামলায় গ্রেফতারকৃত আসামি মনির আদালতকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মহানগর হাকিম মোহাম্মদ হারুন অর রশিদের আদালতে বাকলিয়া থানার একটি অস্ত্র মামলায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মনির বলেছেন গ্র্রেফতার হওয়ার চার থেকে পাঁচ দিন আগে এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা (মাহমুদা হত্যায় অস্ত্র সরবরাহকারী) তার সহযোগী মো. মনিরকে কাপড়ভর্তি একটি ব্যাগ রাখতে দেন। পরে পুলিশ ভোলার দেওয়া তথ্য মতে মনিরের বাসায় অভিযান চালিয়ে ওই ব্যাগ থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করে।
এর আগে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত দুই আসামির দেওয়া জবানবন্দিতেও উঠে এসেছে, হত্যাকা-ে অংশ নেওয়া কামরুল শিকদার ওরফে মুছাকে (নিখোঁজ) অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন ভোলা।
এদিকে, গতকাল বিকেল থেকে ভোলাকে অস্ত্র মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। অস্ত্র মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাকলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মহিম উদ্দিন বলেন, তিন দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামি মনিরকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বলেন, ভোলা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার চার থেকে পাঁচ দিন আগে তাকে (মনির) কাপড়ভর্তি একটি ব্যাগ দিয়ে যান। ব্যাগটি নিয়ে মনির ১০-১৫ মিনিট তার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু ভোলা ব্যাগটি নিতে না আসায় মনির তার বাসায় রেখে দেন। ব্যাগের ভেতর কী আছে তা তার জানা ছিল না। পরে পুলিশ ভোলাকে নিয়ে তার বাসায় গেলে ব্যাগটি পুলিশকে দেওয়া হয়। এ সময় মনির ব্যাগের ভেতর অস্ত্র-গুলি দেখতে পায়। অস্ত্রগুলো দিয়ে ভোলা কী করেছে তা মনিরের জানা নেই।
উল্লেখ্য, গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা। হত্যাকা-ের পর মাহমুদার স্বামী এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। হত্যাকা-ের ২১ দিন পর ২৬ জুন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. ইকবাল বাহার ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, মাহমুদা হত্যাকা-ে মুছাসহ (পুলিশের সোর্স) সাত-আটজন অংশ নেন। হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া দুই আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ার ২৬ জুন চট্টগ্রাম আদালতে জবানবন্দি দেন। এতে তারা উল্লেখ করেন, হত্যাকা-ে ওয়াসিম, আনোয়ার, মো. রাশেদ, নবী, মো. শাহজাহান, কামরুল সিকদার ওরফে মুছা ও মো. কালু অংশ নেন। তাদের মধ্যে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে ছিলেন ওয়াসিম, মুছা ও নবী। মাহমুদাকে ছুরিকাঘাত করেন নবী। ভোলা অস্ত্র সরবরাহ করেন।
আসামিদের মধ্যে নবী ও রাশেদ ৫ জুলাই ভোরে রাঙ্গুনিয়ায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মুছাকে ২২ জুন বন্দর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে বলে দাবি করে আসছেন তার স্ত্রী পান্না আক্তার। তবে পুলিশ তা অস্বীকার করে বলছে, মুছাকে হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছে। পলাতক রয়েছে আসামি কালু। পুলিশের হাতে গ্রেফতার আছে ওয়াসিম, আনোয়ার, শাহজাহান, মুছার ভাই সাইদুল শিকদার ওরফে সাকু, অস্ত্র সরবরাহকারী এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা ও ভোলার সহযোগী মনির।
ভোলা ও মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বাকলিয়া থানার পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ৩ জুলাই তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি