মহানবী (সা.)-এর দাড়ি মোবারক!
হুমায়ুন আইয়ুব
হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে পৃথিবীতে আসা সব নবী ও রাসুলের মুখে দাড়ি ছিল। মানবতার নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মুখেও ছিল দাড়ির সৌন্দর্য। বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ শামায়েলে তিরমিজিসহ হাদিসের কিতাবে এসেছে, রাসুল (সা.)-এর দাড়ি মোবারক ছিল কালো। গভীর, ঘন ও প্রশস্ত। নবীজির বুকের উপরের অংশ দাড়িতে ভরে যেত।
আর সাহাবিদের দাড়ি কেমন ছিল? ইতিহাস গ্রন্থে এসেছে, সাহাবাদের দৈহিক বর্ণনার মধ্যে দাড়ির দৈর্ঘ্যরে কথা আছে। হজরত আবু বকরের (রা.) দাড়ি ঘন ছিল, হজরত ওমর, ওসমান ও হজরত আলির (রা.)-এর দাড়ি দীর্ঘ ছিল।
আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, পারস্যের সম্রাট কিসরা ইয়েমেনের শাসকের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে দুজন দূত পাঠান। যাদের কারও দাড়ি ছিল না, আর গোঁফ ছিল বড়। তাদের চেহারার এই অবয়ব দেখে রাসুল (সা.) মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেন। জিজ্ঞেস করেন, কে তোমাদের এমন করতে বলেছে? তারা উত্তর দিল, আমাদের প্রভু ‘কিসরা’। মহানবী (সা.) তখন বললেন, আমার রব, যিনি পবিত্র ও সম্মানিত, তিনি আদেশ করেছেন যেন আমি দাড়ি লম্বা রাখি এবং গোঁফ ছোট রাখি। (তাফসিরে তাবারি, ফিকহুস সিরাহ পৃষ্ঠা : ৩৫৯ )
এছাড়াও ইবন ওমর (রা.) সূত্রে রাসুল (সা.) বলেন, আমাদের আদেশ করেছেন, গোঁফ ছেটে রাখো, আর দাড়িকে দীর্ঘ হওয়ার সুযোগ দাও। (বুখারি ও মুসলিম)
জাবির বিন সামুরাহ (রা.) বলেন, রাসুলের (সা.) দাড়ি ছিল বেশ বড়।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, গোঁফ ছোট কর ও দাড়ি বড় কর, অগ্নি উপাসকদের থেকে ভিন্নবেশী হও।’ অন্য হাদিসে এসেছে, দাড়ি বড় রাখার মাধ্যমে ইহুদি-খ্রিস্টানদের বিপরীত কর। মুশরিকদের চেয়ে আলাদা হও। (মুসলিম শরিফ)
ইসলামে দাড়ি রাখা ওয়াজিব। চার মাজহাবের ইমামরাও এ বিষয়ে একমত। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর অভিমত হলো, দাড়ি মু-ানো হারাম। ইমাম কুরতুবি (র.) বলেন, দাড়ি মু-ানো, উঠানো বা কর্তন করা কোনোটাই জায়েজ নেই। হানাফি মাজহাবের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ দুররে মুখতারের (২য় খন্ড/৪৫৯ পৃ) বলা হয়েছে, পুরুষের জন্য দাড়ি কর্তন করা হারাম। মালিকি মাজহাব মতে দাড়ি কাটা হারাম। (আল আদাভী আলা শারহে কিফায়াতুত তালেব রাব্বানী ৮ম খ- ৮৯ পৃ) ইমাম শাফেয়ি (রহ.) তার প্রখ্যাত গ্রন্থ ‘আল উম্ম’ উল্লেখ করেছেন যে, দাড়ি কর্তন করা হারাম। শাফেয়ি মাজহাবের আলেম আযরাঈ বলেন, সঠিক কথা হচ্ছে কোনো কারণ ছাড়া সম্পূর্ণ দাড়ি মু-ন করা হারাম। (হাওয়াশী শারওয়ানি ৯ম খ- ৩৭৬ পৃ)। হাম্বলী মাজহাবের ইমামরাও দাড়ি মু-নকে হারাম বলেছেন। (ইনসাফ, শরহে মুন্তাহা)।