গোয়েন্দারা খুঁজছেন ৯১০ অবৈধ বিদেশি নাগরিক
দীপক চৌধুরী : বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে ৯১০ জনের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও তাদের ব্যাপারে কোনো তথ্য পাচ্ছেন না গোয়েন্দারা। বিদেশি নাগরিকের ব্যাপারে সবরকম সতর্কমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি অবৈধ নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করাকে সংশ্লিষ্টরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন এখন।
জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের হাতে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জাপান ও ইতালিসহ বিদেশি নাগরিকদের হত্যার পর সরকারের গোয়েন্দারা অবৈধ বিদেশি নাগরিকের সন্ধানে ব্যস্ত বলে জানায় র্যাবের একটি সূত্র।
সন্ত্রাসী-জঙ্গি হামলায় বিদেশি নাগরিকদের বেছে নেওয়া হচ্ছে এখন। সন্ত্রাসীরা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এ পরিকল্পনা নিয়েছে। এমন আশঙ্কা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন কর্মকর্তা জানান, সরকারের জন্য এখন সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার বিষয় বিদেশি নাগরিক। সেটা বৈধই হোক আর অবৈধই হোক।
সূত্রমতে, অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেনÑ চীন, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, ডেনমার্ক, স্পেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ক্যামেরুন, নাইজেরিয়া, ঘানা, কঙ্গো, লিবিয়া, আফগানিস্তান, সুদান, তাঞ্জানিয়া, উগান্ডা ও শ্রীলঙ্কার নাগরিক।
বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের অনেকে শুধু অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করছেন না, বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছেন। প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া এবং ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির মতো অপরাধের সাথে বিদেশি নাগরিকদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এদের গ্রেফতার করতেও সক্ষম হয়েছেন।
অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে অবৈধ বিদেশিদের তালিকা সংরক্ষিত আছে। অবৈধ বিদেশিদের শনাক্তকরণের জন্য প্রতিদিনই স্পেশাল ব্রাঞ্চসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অবৈধভাবে চাকরিরত বিদেশির সন্ধান পেলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ইমিগ্রেশন ডাটাবেজ অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে ১ লাখ ১১ হাজার ৫৭৫ জন বৈধ বিদেশি নাগরিক অবস্থান করছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৯১০ অবৈধ বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে বসবাস করছেন। বিভিন্ন সময়ে এসব নাগরিক নানা ধরনের অপরাধেও জড়িয়েছেন। এছাড়া এসব অবৈধ বিদেশিদের আয় করা অর্থ অবৈধভাবেই বিদেশে পাচার হচ্ছে।
বিনিয়োগ বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৩ হাজার বিদেশি নাগরিক বৈধভাবে কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু এর বাইরে ৩৫০ জন বিদেশ কর্মীর কর্মানুমতি পত্র সরকার বাতিল করেছে। তথ্য অনুযায়ী, ভারত, চীন, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, ডেনমার্ক এবং স্পেনের এসব বিদেশি কর্মী শিল্প এবং বাণিজ্যিক খাতে কর্মরত ছিল। আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, এদেশে অবস্থানকারী অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে অধিকাংশই দক্ষিণ আফ্রিকা, ক্যামেরুন, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স, নাইজিরিয়া, ঘানা, কঙ্গো, লিবিয়া, আফগানিস্তান, সুদান, তাঞ্জানিয়া, উগান্ডা ও শ্রীলঙ্কার নাগরিক।
অবৈধ বিদেশিরা বাংলাদেশের সরকারকে কোনোরকম ভ্যাট বা কর দেন না। অথচ এদেশে অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করে তারা নিজ নিজ দেশে পাঠাচ্ছেন। সাধারণত হুন্ডির মাধ্যমেই তারা নিজ নিজ দেশে অর্থ পাঠিয়ে থাকেন।
একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়িক ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসে থাইল্যান্ডের তরুণীদের অনেকেই রাজধানীর অভিজাত এলাকার নামি-দামি হোটেল, ম্যাসেজ পার্লার ও স্পা সেন্টারে কাজ করছেন। ভ্রমণ, ছাত্র ও ব্যবসায়িক ভিসা নিয়ে বিদেশিরা এদেশে এসে প্রতারণাসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও অবৈধভাবে এখানে অবস্থান করায় পুলিশ গত বছর বেশ কয়েকজন থাই তরুণী নাগরিককে থাইল্যান্ডে ফেরত পাঠায়। অবৈধকাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ক্যামেরুনের বেশ কয়েকজন নাগরিককে গ্রেফতার করে তাদের কাছ থেকে জাল ডলার ও ডলার তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, বাংলাদেশে কিছু অবৈধ বিদেশি নাগরিক আছেন। এমনও দেখা গেছে কোনো কোনো বিদেশি নাগরিক এদেশে এসেছিলেন তিন মাসের জন্য। তবে দুই বছর হয়ে যাওয়ার পরেও তারা ফেরৎ যাননি। আবার এদেশে থাকার কারণের ব্যাপারে তারা যৌক্তিক কারণও দেখাতে পারেন না। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এসব অবৈধ নাগরিকের বিষয়ে অনেক তথ্য উঠে এসেছে। সেক্ষেত্রে এসব বিদেশি নাগরিককে আটকের পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পর তাদের দেশে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করছি আমরা। এছাড়া ওইসব বিদেশি নাগরিকের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়ে থাকে। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম