১৫ বছরে জঙ্গি হামলায় সারাবিশ্বে দেড় লাখ নিহত
আজাদ হোসেন সুমন : জঙ্গিগোষ্ঠীর বিষাক্ত নিঃশ্বাসে বিভিন্ন সময় তপ্ত হয়েছে বিশ্ব। শুধু বাংলাদেশ নয় বিভিন্ন সময় বোমাহামলা চালিয়ে বিশ্বের মহাশক্তিধর উন্নত দেশুগুলোকেও কাঁপিয়েছে জঙ্গিরা। গত ১৫ বছরে জঙ্গি হামলায় সারাবিশ্বে প্রাণ গেছে প্রায় দেড় লাখ মানুষের। সূত্র : ইন্টারনেট।
সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা ৪৮ মিনিটের সময় জঙ্গিরা হামলা চালায়। মার্কিন এয়ারলাইন্সের ২০ হাজার লিটার জেট ফুয়েল ভর্তি দুটো বিমান হাইজ্যাক করে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে (টুইন টাওয়ার) হামলা চালায়। এই ঘটনায় ২ হাজার ৯৯৬ জন নিহত ও প্রায় ৬ হাজার আহত হয়। মার্কিনিরা স্তম্ভিত হয়ে পড়ে স্মরণকালের ভয়াবহ এ জঙ্গি হামলার ঘটনায়। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের এমন করুণ পরিণতি দেখে বিশ্ববাসীও হতভম্ব হয়ে পড়ে। ২০০৪ সালে জামায়াত-বিএনপি জোট ক্ষমতায় থাকাকালে ৬৩ জেলায় গ্রেনেড হামলায় কেঁপে উঠেছিল সমগ্র বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের মদদপুষ্ট এদেশীয় জঙ্গিরা একযোগে এ বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাই হামলা পুরো বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেয়। সেদিন ওই শহরের তাজ হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে ১০টিরও বেশি ধারাবাহিক গুলি ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ হামলায় ১৬৪ জন নিহত ও কমপক্ষে ৩০৮ জন আহত হন। হামলাকারী জঙ্গিরা ছিল পাকিস্তানি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সদস্য। মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলা এশিয়াজুড়ে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সক্ষমতার একটি চিত্র তুলে আনে। ২০০৫ সালের ৭ জুলাইয়ে মধ্য লন্ডনের তিনটি আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন ও একটি বাসে আত্মঘাতী সিরিজ বোমা হামলায় নিহত হন ৫২ জন। আহত হন ৭ শতাধিক মানুষ। ব্রিটেনের মাটিতে এটাই ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। লন্ডনে বোমা হামলাকারী চার জঙ্গির সঙ্গে আল কায়েদার যোগাযোগ ছিল। ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর দক্ষিণ বৈরুতের শিয়া অধ্যুষিত এলাকায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪৩ জন নিহত ও ২০০ জন আহত হন। লেবাননে এই ভয়াবহ হামলার দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। শিয়া হওয়ার কারণেই এখানকার মানুষ আইএসের টার্গেট হয়। ২০১৪ সালের শেষ দিকে পাকিস্তানের পেশোয়ারে সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি স্কুলে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায় তালেবান জঙ্গিরা। এতে নিহত হয়েছে ১৩০-এর বেশি শিক্ষার্থী ও অন্তত ১২০ জনেরও বেশি স্কুলশিশু আহত হয়। বিশ্বব্যাপী চলা সন্ত্রাসবাদের মধ্যে এটি ছিল ভয়ঙ্করতম। পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান এ হামলার দায় স্বীকার করে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে লেবাননের বৈরুতে বেশকিছু সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে আল কায়েদা সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো। এসব ঘটনায় অসংখ্য হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। লেবাননজুড়েই আইএসের তা-ব চলছে। ২০১৩ সালে আলজেরিয়ায় জঙ্গি হামলায় ১০ জাপান নাগরিক নিহত হয়। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি উগ্রসন্ত্রাসীরা ফ্রান্সের প্যারিসে শার্লি অ্যাবডো পত্রিকা অফিসে হামলা চালায়। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ১১ জন নিহত হয়।
জঙ্গিবাদ মোকাবিলার প্রশ্নে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। উপরন্তু উগ্র সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ করতে সমাজের সর্বস্তরের লোকদের এগিয়ে আসতে হবে। ধর্মীয় উগ্রবাদিতা থেকে মুক্ত থাকার জন্য মাদ্রাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমামদের দ্বারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে হবে। মূলত দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূলে সরকারের পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যদি দেশে সবার সার্বিক প্রচেষ্টায় এ ধরনের ঐক্যবদ্ধ সামাজিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয় জঙ্গিরা সুবিধা করতে পারবে না।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, যারা এদেশে আইএস খোঁজে তাদের দেশও কোনো না কোনো সময় জঙ্গি হামলায় প্রকম্পিত হয়েছে। জঙ্গিরা আত্মঘাতী হওয়ায় গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে তাদের ঠেকানো বা আগাম তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আরও ঢেলে সাজাতে হবে। আর জঙ্গিবাদ প্রকৃত অর্থেই নির্মূল করতে হলে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম