ছাতকে মনিপুরী তাঁতশিল্প ধ্বংসের পথে
নুর উদ্দিন, ছাতক (সুনামগঞ্জ) : ছাতকে ইসলামপুর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় নৃ-গোষ্টি ৬৫ পরিবার বসবাস করছে। উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে আর কোন নৃ-গোষ্টি পরিবারের অস্তিত্ব নেই। একমাত্র তাঁত শিল্পকে পুঁজি করেই চলছে তাদের প্রত্যহিক জীবন-জীবিকা। কিন্তু পৃষ্টপোষকতার অভাবে তাদের একমাত্র অবলম্বন তাঁত শিল্প এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে।
সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম মনিপুরী বস্তি, রাসনগর, ধনীটিলা গ্রামের উপজাতি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এ উপজেলায় নৃ-গোষ্টি ছাড়া আর কোন পরিবার তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত নয়। এসব সঙ্খ্যালঘু পরিবারের সবাই তাঁতে কাপড় বুনা, চরকা দিয়ে সূতা কাটাসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। কিন্তু অর্থাভাবে তাদের হাতে বুনা কাপড় বিক্রি ও বিপননে উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেনা। টাকার অভাবে শ্রীমঙ্গলের আদমপুর থেকে সূতা ক্রয় করতে পারছেনা তারা। এজন্যে একের পর এক বন্ধ হতে চলেছে নৃ-গোষ্টির তাঁত ও ক্ষুদ্র কুটির শিল্প কারখানা।
তারা উপজাতি থাকায় এসব তাঁত ওক্ষুদ্র কুটির শিল্প পরিচালনার জন্যে ঋণ দিচ্ছে না সরকারি বেসরকারি কোন ব্যাংক বা সংস্থা। বিদ্যুৎ, পানি ও যাতায়াত ব্যবস্থার ফলে দেশের সম্ভাবনাময় তাঁত শিল্প এখন বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে এসে পৌছেছে। জানা যায়, ছাতক শহর থেকে প্রায় ২০ কি.মি. দূরে ভারতভীয় সীমান্ত ঘেঁষা এসব গ্রাম। এখানে বসবাস করেন ৬৫ কর্মজীবী পরিবার। তারা কাপড় বুনে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রেখেও কোন সরকারি সূযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। গ্রামে বিদ্যুৎ থাকলে তাঁতশিল্পকে আরো বিকশিত করা যেত বলে তারা আক্ষেপের সঙ্গে জানায়।
ব্যাংক ঋণের জন্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন দফতরে ধরনা দিলেও কোন সুরাহা হচ্ছে না। তারা ব্যাংক ঋন নিয়ে দেশের অন্যান্য এলাকার নৃ-গোষ্টির ন্যায় হস্তশিল্প ও তাঁতের কাপড়সহ রুচিশীল দ্রব্য সামগ্রীর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কারখানা তৈরী করতে আগ্রহী। কিন্তু যাতায়াত ব্যবস্থা ও বাড়ি দূরবর্তী থাকার অজুহাতে সভাও সেমিনারে তাদেরে ডাকা হয়নি। এজন্যে ব্যবসা ঠিকিয়ে রাখার স্বার্থে ছাতক আনসার ও ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, অগ্রনী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের কাছে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়ার দাবী জানান। কিন্তু গভর্নরের আদেশ থাকার পরও এসব ব্যাংক তাদের নামে ঋণ মঞ্জুর করেনি।
এর আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুজ্জামানের কাছে ঋনের দাবীতে আরেকটি আবেদন করে। অবশেষে নিরুপায় হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে এ আবেদন করা হয়। ঋবর্তমানে সারা বিশ্বে মনিপুরী কাপড়ের বিপুল চাহিদা থাকলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে তারা উৎপাদিত কাপড়ের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না।
এখন প্রত্যেকের বাড়িতে একটি করে তাঁত শিল্প রয়েছে। এযাবত সুবিধা বঞ্চিত পরিবারগুলো কোন ধরনের রেশন বা ভাতা পায়নি। সরকারের সদিচ্ছা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এসব লোকজন দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।