ফরিদুল মোস্তফা খান, কক্সবাজার : ঈদ আনন্দের প্রারম্ভে কক্সবাজার জেলার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেলেও এখন বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে পর্যটক শুণ্যে পরিনত হচ্ছে। পার্ক কর্তৃপক্ষ ও কিছু নতুন ইজারাদারের অনিয়মে শতশত দর্শনার্থী বিমুখ হয়ে ফিরছেন। সরেজমিনে জানা যায় ঈদ আনন্দে ভ্রমণ পিপাসু লোকজন পার্কে বেড়াতে আসলেও পরবর্তিতে আর কখনো না আসার প্রতিজ্ঞা করে যান অনেকে।
রামু থেকে পার্কে আগত দর্শনার্থী রাইহান জানান ঈদের পরদিন আমার পরিবারের সকলকে নিয়ে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে বেড়াতে আসি। এসেই দেখি পার্কের ভিতরে ও বাইরে অযুহাতধারী পকেটমার। বাঘের খাঁচায় বাঘ দেখতে গেলেও টাকা, ভল্লুকের নতুন খাঁচায় ভল্লুক দেখতে গেলেও টাকা, আবর্জনা পরিবেশে মিউজিয়াম দেখতে গেলেও টাকা দিতে হচ্ছে। সাফারি পার্কে ঘুরে দেখা যায় পার্কের অভ্যন্তরে পর্যটকরা ক্লান্ত হয়ে একটু জল মুখে দেবে ওই সুযোগটাও এখন নাই।
পার্কের অভ্যন্তরে কয়েকটি চাপ কল বসানো থাকলেও তা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বাঘের খাঁচার পাশে বাথরুম সংলগ্ন একটি কল ইজারা নেওয়ার নাম করে টাকার বিনিময়ে পানি বিক্রি করতে লক্ষ্য করা গেছে।
এসব বিবেচনা করে পর্যটকরা একবার আসলেও পুনঃরায় পার্কে বেড়াতে আসার নাম নিচ্ছে না। ওসমস্ত অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপারে সাফারী পার্কের রেন্জ কর্মকর্তা মো. নুরুল হুদার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন পার্কের উল্লেখিত অংশসমূহ ইজারাদারদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ওখানে আমাদের এখন কোন হাত নেই।
দর্শনার্থী দিন দিন অবনতির কথা স্বীকার করেন গেইড ও টিকেট কাউন্টারের ইজারাদার মো. ফখরুল। তিনি জানান ঈদের দিন টিকেট বিক্রি হয়েছিল সাড়ে এগার হাজারের উপরে কিন্তু এখন দিন দিন অনেক অংশ কমে গেছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পার্ক কর্মকর্তা জানান গেইড় ও কাউন্টার ইজারা নিয়েছে মো. নাছির উদ্দিন, মো. ফরিদুল আলম প্রকাশ আদা ফরিদ, রফিকুল ইসলাম প্রকাশ রফিক মেম্বার ও ফখরুল ইসলাম, তবে সাফারি পার্কের ভিতরে কোন কিছুই ইজারা দেওয়া হয়নি যা অনিয়ম চলছে পার্ক কর্তৃপক্ষের ইশারায় হচ্ছে। ইতিপূর্বে সাফারি পার্কের কর্মকর্তা কর্মচারীর অবহেলায় খাঁচা থেকে বাঘ বের হয়ে উন্মুক্ত হয়ে গিয়ে পুরো এলাকাজুড়ে আতংক বিরাজ করেছিল। এছাড়াও পার্কটি প্রতিষ্ঠার পর হিং¯্র পশুর আক্রমনে দুটি প্রাণহানিও ঘটার ইতিহাস রয়েছে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সাফারি পার্ক ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক নামকরণে কক্সবাজার জেলায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে দশ-বিদেশে সুনাম বয়ে আনছিল। কিন্তু সম্প্রতি কর্মকর্তা, কর্মচারি ও কিছু ইজারাদারের অনিয়মের অভিযোগে হারাতে যাচ্ছে সেই ঐতিহ্য। এমতাবস্থায় পার্কটিতে অনিয়মকারী কর্মকর্তাদের চিহ্নিতপূর্বক পরিবর্তন করা না হলে সরকার বিশাল অংকের রাজস্ব হারানোর আশংকা করা হচ্ছে।