
ফেনীতে সর্ববৃহৎ হাইব্রিড বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প
শাহজালাল ভূঞা, ফেনী : বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি ফেনী নদীর মোহনায় সোনাগাজীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে এক হাজার একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প।
ইলেকট্রিসিটি জেনারেশান কোম্পানী অব বাংলাদেশ লি. (বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনস্থ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রতিষ্ঠান) একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে সোনাগাজী উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়নের চর পূর্ব বড়ধলী মৌজায় এক হাজার একর জায়গার ওপর এ বিদ্যুৎ প্রকল্প প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের অধিনস্থ পাওয়ার সেল এর তত্ত্বাবধানে ও বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় উক্ত স্থানে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি) করার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কন্সালটেন্ট নিয়োগের টেন্ডার হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এর পরিধি আরো বাড়বে বলে কোম্পানীর লোকজন জানিয়েছেন।
জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে এ সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প হতে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প হতে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎসহ মোট ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে যা দেশের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রীডে যোগ হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের লক্ষ্যে সোলার প্যানেলের নিচে উপকূলীয় প্রজাতির মৎস্য চাষের পরিকল্পনা আছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটি এশিয়া মহাদেশের তথা আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলে সর্বপ্রথম অনন্য প্রকল্প হিসাবে বিবেচিত হবে।
গত ৩০ জুন বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয়ের সচিব মনোয়ার ইসলাম বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে এসে পরিদর্শন করেন।
প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর ড. কাজী মুহম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাংলাদেশের ‘প্রথম হাইব্রিড প্রজেক্ট’ যা এশিয়া মহাদেশের ও আর্ন্তজাতিক পরিসরেও একটি মডেল হিসাবে গন্য হবে। প্রকল্প এলাকায় প্রথম পর্যায়ে ১০০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে, পর্যাক্রমে এর পরিধি আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ভূমি বিভাগের সহায়তায় প্রকল্প এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। উক্ত প্রকল্প এলাকায় যাদের ভূমি পড়েছে তাদেরকে সরকারীভাবে ভূমির ক্ষতিপূরণসহ জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, এ বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পটি সম্পূর্ণই পরিবেশ বান্ধব। এখানে প্রতিনিয়ত সাগরের দিক হতে বাতাস প্রবাহিত হয় আর সূর্যের রশ্মির তীক্ষèতা বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল হতে কিছতা বেশী। প্রকল্পটি যাতে সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায় এ জন্য আমরা আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরেজমিনে প্রকল্প এলাকার বাতাসের গতি এবং সূর্যের আলোর তীক্ষ্ণতা পর্যবেক্ষণ করা হবে। অপরদিকে জমির সর্ব্বোচ্চ ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রকল্প এলাকায় সোলার প্যানেলের নিচে মাছ চাষের প্রকল্পও হাতে নেয়া হবে যার মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে।
স্থানীয় এলাকাবাসি জানান, প্রকল্প এলাকাটি সাগরের কাছাকাছি হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও জলোচ্ছাসের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্রকল্প এলাকার বাহিরে যত সম্ভব আউটার বেড়িবাধ নির্মাণ অত্যন্ত জরুরী।
অভিজ্ঞ মহলের মতে, দেশে দিন দিন শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠায় প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ সমস্যাটি দেশের প্রধান সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে বর্তমানে নবায়ন যোগ্য জ্বালানি হতে এ বিশাল বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন হলে আমদানিকৃত জ্বালানীর উপর ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা কমে আসবে ও বিদ্যুৎ উৎপাদন সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে বলে অনেকেই মনে করেন।
