ম্যাককিনজের গবেষণা উন্নত অর্থনীতির দুই-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠীর আয়ে স্থবিরতা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সময় বয়ে চললেও উন্নত অর্থনীতির অনেক দেশের নাগরিকের আয়ে তেমন কোনো উন্নতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। এক দশক আগের হিসাবের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ২৫টি অর্থনীতির দেশের দুই-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠীই তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের চেয়ে কম অথবা একই রকম আয় করছে। আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনজের সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল
ম্যাককিনজে গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে ৫৪ কোটি থেকে ৫৮ কোটি মানুষ যে পরিমাণ আয় করেছে; ২০০৫ সালে তা একই রকম বা কিছুটা বেশি ছিল। এ জরিপটির মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী সময়কার উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর প্রথা ভাঙার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সে সময় অর্থনীতি উত্থান-পতনের মধ্যে ছিল এবং বেশির ভাগ পরিবারই তাদের পূর্বসূরিদের অনুপাতে নিজেদের জীবনমান উন্নত করতে পারছিল না।
ম্যাককিনজের জ্যেষ্ঠ অংশীদার ও গবেষণা প্রতিবেদনটির একজন লেখক রিচার্ড ডবস বলেন, বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট ছড়িয়ে পড়ার পূর্বমুহূর্তে পশ্চিমা বিশ্বের মাত্র ২ শতাংশ মানুষের ১০ বছর আগের তুলনায় জীবনমানে উন্নতি লক্ষ করা যায়নি। তবে ক্রমান্বয়ে এমন লোকের দল ভারি হতে থাকে— যাদের জীবনমানে কোনো অগ্রগতিই চোখে পড়ছিল না; যার ওপর ভর করে বিশ্বও পরিবর্তিত হতে থাকে।
বিশ্বের আর্থিক খাতে সৃষ্ট বাবল (বুদ্বুদ) ও বৈশ্বিক সংকট এসব জনগোষ্ঠীকে পেছনে ফেলেছে বলে গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে। এক দশক আগে আর্থিক বাজারে সৃষ্ট অস্থিতিশীল বাবলের কারণে অনেকের আয় বেড়ে গিয়েছিল। আর একই কারণে তৈরি হওয়া আর্থিক সংকট বিশ্ব অর্থনীতিকে পুরোপুরি মন্দায় ডুবিয়ে দেয়। সে পরিস্থিতি থেকে বিশ্ব অর্থনীতি এখনো সার্বিকভাবে বের হয়ে আসতে পারেনি। এসব কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ব্রেক্সিট ভোটের কথা উল্লেখ করা যায়। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল এর বিপক্ষে থাকলেও সাধারণ মানুষ ব্রেক্সিটের পক্ষেই ভোট দিয়েছে। এতে ব্রিটেনের বিব্রত প্রধানমন্ত্রী তার দায়িত্বই ছেড়ে দিয়েছেন। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের পরিবারগুলোর ওপর জরিপ করেছে ম্যাককিনজে। এখানে দেখা গেছে, ৩০-৪০ শতাংশ পরিবার থেকে বলা হয়েছে তাদের আয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এমনকি কিছু পরিবারকে স্থানান্তর ও কর সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে পরিসংখ্যানগত কিছু অগ্রগতি চোখে পড়েছে, কিন্তু এর পরও অনেক পরিবার বেশি আয়ের আকাক্সক্ষায় রয়েছে। এ ধরনের পরিবারগুলো ব্যবসা ও অভিবাসনের ক্ষেত্রেও চরম নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। ম্যাককিনজের সাম্প্রতিক গবেষণায় এক দশক আগের তুলনায় বর্তমানে পরিবারগুলোর আয়ে কতটা পরিবর্তন হয়েছে, তা দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও ১০ বছর আগের তুলনায় পরিবারগুলো একই রকম অবস্থানে নেই, কর্মক্ষেত্রে তরুণরা প্রবেশ করেছে, মধ্যবয়সী কর্মীরা পেশায় উন্নতি করেছে আর অবসর নিয়ে কর্মক্ষেত্র ছেড়েছেন অনেকেই। কিন্তু সার্বিকভাবে দেখা যায়, এক দশক আগের চেয়ে আয়ের হার কমে গেছে। ম্যাককিনজের গবেষণায় আয় স্থবিরের একটি প্রভাবের ওপর সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, বিদ্যমান ধারায় কোনো পরিবর্তন না হলে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম তাদের মা-বাবার চেয়ে দরিদ্র হয়ে পড়বে।
বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ পরিবার এ ধারার মধ্যে রয়েছে। অবশ্য দেশভেদে এদের মধ্যে ভিন্নতাও রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অতিদরিদ্র ৩০ শতাংশ পরিবারের জীবনমানে উন্নতি হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ দরিদ্র ও ২০ শতাংশ ধনীদের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। বেশির ভাগ উন্নত অর্থনীতির দেশের সরকার এ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। ম্যাককিনজে বলছে, আগামী দশকে এ ধারা অব্যাহত থাকবে ও উন্নত অর্থনীতির বেশির ভাগ দেশকে আরেকটি স্থবির আয়ের দশক পার হতে হবে।