আমাদের অর্থনীতিকে একান্ত সাক্ষাৎকারে হান্নান শাহ ‘জঙ্গিরা আওয়ামী ঘরনার’
চলমান উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং তাদের স্বজনরা জড়িত বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। সেই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে এই সকল ঘটনার দায়ভার বিএনপির উপর চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলেও জানিয়েছে দলটি। এরই প্রেক্ষিতে চলমান উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসসহ নানা বিষয় নিয়ে আমাদের অর্থনীতির সাথে একান্তে কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কিরণ সেখ।
গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তারাঁয় জঙ্গি হামলায় আপনার ব্যক্তিগত অভিমত কি?
হান্নান শাহ: গুলশানে জঙ্গি হামলা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ও ন্যক্কারজনক একটি ঘটনা। এই ঘটনায় বর্হিবিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, কূটনৈতিক এলাকায় এমন একটি ঘটনা ঘটলো অথচ সরকারের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা কিছুই জানলো না? তাই আমি মনে করি, এটা সরকারের আরও একটি ব্যর্থতা। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ও ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে বলেছেন, এই প্রথম আমাদের সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং শুধু স্বীকার করলেই হবে না। কারণ এর ফলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে, আগামী দিনে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনাও দেখা দিয়েছে। আর এর ফলে বিদেশিরা আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। ফলে এসকল দায়-দায়িত্ব থেকে বর্তমার সরকার মুক্তি পাচ্ছেন না।
উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী মোকাবিলায় সরকারের করণীয় কি?
হান্নান শাহ: বর্তমান সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, তাদের (সরকার) উপর জনগণের সমর্থন নেই। তাই দেশে সুন্দর পরিবেশে নির্বাচনের জন্য এবং সরকার বদলের সময় যাতে কোনো গন্ডগোল না হয়, সেই কারণে অনতিবিলম্বে সরকারের উচিত পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। কারণ জনগণের সরকারই উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী দমন করতে পারবে।
হলি আর্টিজান রেস্তারাঁয় জঙ্গি হামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সফলতা ও ব্যর্থতা প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কি?
হান্নান শাহ: গুলশানে জঙ্গি হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ছাড়া বাকি যেগুলো নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে তারা সন্ত্রাসী মোকাবিলায় অতীতের মতো এবারও ব্যর্থ হয়েছে। সন্ত্রাসী মোকাবিলায় পুলিশ ও র্যাবের ব্যর্থতার মূল কারণ হলো, সরকার পুলিশ ও র্যাবকে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে দিচ্ছে না। পুলিশ ও র্যাবকে সরকারবিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পিছনে লাগিয়ে রেখেছে। কারণ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করা সহজ। কিন্তু জঙ্গি মোকাবিলা করা খুবই কঠিন। গুলশানে জঙ্গি হামলার সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, বিষয়টি তারা গুরুত্ব সহকারে দেখছেন, পুলিশ ও র্যাব যৌথভাবে অভিযান চালাবে বলেও বলেছিলেন তিনি। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা দেখেছি পুলিশ অভিযান চালাতেও ব্যর্থ হয়েছে। মূলত রাজনীতি প্রক্রিয়াকরণের কারণে নিরাপত্তা বাহিনী দুর্বল হয়ে পড়েছে।
আপনি বলছেন, রাজনীতি প্রক্রিয়াকরণের ফলে নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসী মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। কি করলে নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসী মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে?
হান্নান শাহ: নিরাপত্তা বাহিনীর পেশাগত দায়িত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে। জঙ্গিদের মোকাবিলা করতে পুলিশ ও র্যাবকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যাতে পরবর্তীতে যেখানে হামলা হবে সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালাতে সক্ষম হয়।
হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিদের নির্মূলের অভিযানকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
হান্নান শাহ: টেলিভিশনে দেখছি, গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ৬ থেকে ৭ জন জঙ্গি ছিল। প্রথমে এদেরকে নির্মূল করার দায়িত্ব ছিল পুলিশের, কিন্তু তারা সেটা পারেননি। পরবর্তীতে র্যাবের উপর দায়িত্ব পড়ে। যাদের নাম শুনলে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সেই র্যাবও ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাঁজোয়া গাড়ি ব্যবহার করে জঙ্গিদের দমন করলেন। এর জন্য সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ। কিন্তু পুলিশ ও র্যাবের অত্যাচারের কারণে তাদের প্রসংশা করা যায় না। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, সাঁজোয়া যান পুলিশ এবং র্যাবেরও আছে তাহলে তারা কেনো সাঁজোয়া যান ব্যবহার করলেন না? অর্থাৎ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করতে করতে পুলিশ ও র্যাবের নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে। আর এই কারণে তারা অভিযান করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
কোন পদক্ষেপের মাধ্যমে জঙ্গি দমন করা সম্ভব বলে আপনি মনে করেন?
হান্নান শাহ: বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করলেই জঙ্গি দমন হবে না। সবাইকে স্মরণে রাখতে হবে, বিএনপি শাসন আমলে আমরা দেশের শীর্ষ জঙ্গিদের গ্রেফতার করেছিলাম। এদের অনেকেই ছিল আওয়ামী লীগের সদস্য। আর ওই সময়ই জঙ্গি দমন করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের বর্তমান ৭-৮ বছরের শাসনে জঙ্গিরা আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। সুতরাং এই জঙ্গি নির্মূল একমাত্র জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেই সম্ভব। আর জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনিবার্য।
গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় পিছনে কারা জড়িত বলে আপনি মনে করেন?
হান্নান শাহ: আওয়ামী লীগের শাসন আমলে বিপদগামী এসব জঙ্গি তৈরি হয়েছে। এদের বেশির ভাগই আওয়ামী ঘরনার মানুষ। যদি কেউ প্রমাণ চায় তাহলে জঙ্গিদের নাম বলে আমি প্রমাণ করে দিতে পারি এবং প্রমাণ করতে পারি আমার বক্তব্য সঠিক। আর আওয়ামী লীগ এটা বুঝেই বেশি হইচই-চিৎকার ও চেঁচামেচি করছে। কিন্তু এসবের সঙ্গে বিএনপির কোনো এক নেতার চাচা, মা ও মেয়ের শ্বশুর কিংবা দূর সম্পর্কের কোনো আত্মীয় থাকতো তাহলে দেখতেন আওয়ামী লীগ কিভাবে বর্হিবিশ্বকে বলতো এই কাজ বিএনপির। এছাড়া গুলশানে জঙ্গিদের মধ্য একজনকে আমি চিনতে পেরেছি। আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম তখন তিনি ‘তার নাম নাই বা বলি’ আমার সচিব ছিলেন। পরর্তীতে তিনি নির্বাচন কমিনারও ছিলেন। তিনি চাকরি থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। তার মত আওয়ামী লীগ একটিও নেই। আর তার ছেলে গুলশানে হামলার ৬ জঙ্গির মধ্যে একজন। এবং জঙ্গি হামলার সঙ্গে কারা জড়িত সেটা বের করার দায়িত্ব সরকারের। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি