আসেম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগাযোগের কৌশলগত সুযোগ নিন
দীপক চৌধুরী : সকল দেশ ও সমাজের মাঝে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কৌশলগত সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানো জন্য আসেম নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহ্বান জানিয়েছেন। শুক্রবার মঙ্গোলিয়ার উলানবাটরে ১১তম আসেম সম্মেলনের প্লেনারি-২ অধিবেশনে ভাষণদানকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ এখন আর কোনো একক দেশের বিষয় নয়। বর্তমানে যোগাযোগব্যবস্থা সবার জন্য কৌশলগত সম্ভাবনা ও সুযোগে পরিণত হয়েছে।
‘আসেমের ২০ বছর : ‘যোগাযোগের মাধ্যমে আগামী দিনের অংশীদারিত্ব’- শীর্ষক প্রতিপাদ্যের এ অধিবেশনে তিনি বলেন, টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে যোগাযোগ কাঠামোর রূপরেখা কী হবে তা তৈরি করা প্রয়োজন।
আসেমের ২০ বছরে পদার্পণে মঙ্গোলিয়ার এ সম্মেলনে বর্তমানে সংঘটিত নানামুখী রূপান্তরের প্রেক্ষাপটে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগব্যবস্থার উপর আলোকপাত করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ আসেমের দেশগুলো নতুন প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র ও সংযোগস্থলে পরিণত হচ্ছে। দীর্ঘদিনের পরিচিত বাণিজ্য ও শিল্প অংশীদাররা এখন নতুনদের জন্য পথ করে দিচ্ছে। আমাদের অর্থনীতিতে উৎপাদন ও সেবা খাতে ধারাবাহিক ও দায়িত্বশীল বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠছে এবং পারস্পরিক আঞ্চলিক কর্মকা-ে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পণ্য বিপণন ব্যবস্থাপনাও সম্প্রসারিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যথাযথ মান এবং সংহতি, বন্ধুত্ব, পারস্পরিক আস্থা ও সমতার মতো নীতির ভিত্তিতেই সব উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে বহুমুখী যোগাযোগের ক্ষেত্রে অগ্রগতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল (বিবিআইএন) এবং বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডোর (বিসিআইএম-ইসি) অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ সংযোগের ফলে বিপুল সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং জনগণের জীবন ও জীবিকার উন্নয়ন ঘটবে। আরও সক্ষমতা ও নতুন অংশীদারিত্বের জন্য আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে সম্পদের অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।
ই-সেবায় বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, অভিন্ন জাতীয় ই-পোর্টালের সঙ্গে যুক্ত দেশব্যাপী ৫ হাজার ৩শ ডিজিটাল সেন্টার এবং প্রায় ৪৩ হাজার সরকারি অফিস এই ই-পোর্টালের অধীনে ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন লোক ৭০টিরও বেশি ই-সেবা গ্রহণ করছে।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, বিশেষ করে সংযোগবিষয়ক আসেম ওয়ার্কিং গ্রুপ আরও বৃহত্তর ফলাফল নিয়ে আসবে।
প্রধানমন্ত্রী দুদিনব্যাপী এশিয়া-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার মঙ্গোলিয়ায় পৌঁছেন। তিনি সাংগ্রিলা হোটেলে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনস্থলে পৌঁছলে মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট তাজখিয়াজিন এ্যালবেগদোরজ তাকে স্বাগত জানান।
শেখ হাসিনা মঙ্গোলিয়ায় তাকে এবং বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে আন্তরিক আতিথেয়তা জানানোর প্রশংসা করে বলেন, দেশটির ঐতিহাসিক এই নগরী পূর্ব ও পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে আন্তঃসংযোগের এক নীরব সাক্ষী।
আসেমভুক্ত ৩০টি ইউরোপীয় ও ২১টি এশীয় দেশ এবং দুটি আন্তঃসরকার সংগঠনের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
দুদিনের এ সম্মেলনে ১১টি দেশের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৩টি দেশের প্রধানমন্ত্রী, ১৬ জন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট এবং অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান ন্যাশনস-এর সেক্রেটারি জেনারেল অংশগ্রহণ করেন। সূত্র : বাসস