সামাদ মিয়ার পাখি ১০ হাতঘড়ি ৫, মাছ-ফুল ১০ টাকায়!
রিকু আমির : সামাদ মিয়া পাখি বানিয়ে বিক্রি করেন মাত্র ১০ টাকায়! ১ পিস করে হাতঘড়ি ৫ টাকা, মাছ ১০ টাকা এবং ফুল ১০ টাকায় বিক্রি করেন! নামহীন, ব্র্যান্ডহীন এসব জিনিস নিষ্প্রাণ হলেও বেশ মজা করেই খাওয়া যায়। বানাতে সময় লাগে মাত্র ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড। তিনি বলেন, বোম্বাই মিঠাই দিয়া এইসব বানাইয়া বেঁচতে বেঁচতে ২২ বছর কাটাইছি ঢাকা শহরে।
নিজের আর্থিক ভাগ্যের প্রভূত উন্নয়ন ঘটাতে না পারলেও গ্রামে কৃষি কাজ করার পাশাপাশি ঢাকায় এসে সামাদ মিয়া এ কাজ করছেন ৫২ বছর বয়সেও। এই সামাদ মিয়ার দেখা পাওয়া যায় গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর পশ্চিম পান্থপথে। তিনি হেঁটে যাচ্ছিলেন পূর্ব রাজাবাজারের দিকে। কাঁধে হেলান দিয়ে ভূমি থেকে ঊর্ধ্বমূখী দাঁড় করানো ছিল একটি পাকা বাঁশ। এর ডগায় গোল করে লাগানো সেই বোম্বাই মিঠাই ছিল প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো। ডগার একটু নিচে খুঁড়ল করা, যেখানে রাখা বাঁশের চিকন কাঠি। এ কাঠিতেই গেঁথে দেয়া হয় বোম্বাই মিঠাই দিয়ে হাতে তাৎক্ষণিকভাবে বানানো মাছ, ফুল, পাখি, হাত ঘড়ি ইত্যাদি।
একসময় রাজধানী, মফস্বলের অলিগলি নয়তো গ্রামের পথে বেশ দেখা যেত, বোম্বাই মিঠাই বিক্রেতাদের। হরেক রকম খেলনা বানাতে দেখা যেত। স্বাদ মিষ্টি হবার পাশাপাশি খেলনা হওয়ায় এটি শিশুদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিল। শিশুদের আকর্ষণ করতে বিক্রেতাদের কেউ পরিধান করতেন বর্ণিল পোশাক, হাত দিয়ে বাজাতেন কাঁসার ঘণ্টা, ঘুঙ্গুর বা বাঁশি। টাকার বিনিময়ে বিক্রির পাশাপাশি পরিত্যক্ত বিভিন্ন সামগ্রী যেমন কাঁচের বোতল, লৌহজাত সামগ্রী, প্রসাধনী সামগ্রীর বডির বিনিময়েও দেয়া হতো এটি। কিন্তু কালক্রমে কমে গেছে এর আবেদন।
সামাদ মিয়াকে দেখে ৩২ বছরের তরুণ বুলবুল ও তার বন্ধু শাখাওয়াত দাঁড় করান। বাল্য বয়সের স্মৃতিচারণ করে বুলবুল বলছিলেন, আহ্, আমাদের স্কুলের গেটে একটা লোক এসব বেঁচতো। কত্ত যে খাইছি…..। আজ কত বছর পর দেখলাম। দেন, একটা পাখি বানিয়ে দেন। শাখাওয়াতও বুলবুলের কথার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বলতে থাকেন, ঠিকই বলেছো বন্ধু, আমি ছোট সময় কাঁচের বোতল জমিয়ে এসব নিতাম।
সামাদ মিয়া তাদের বলতে থাকেন, হ, আগে এইসব অনেক বেচছি, একদিনে এক হাজার টাকা বেচা কোনো ব্যাপারই আছিল না। এহন কী আর হেই দিন আছে। কত দামি দামি চকলেট বাইর হইছে, আমাগো এইসবের বেইল (পাত্তা) নাই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা সামাদ মিয়া এ প্রতিবেদকের প্রশ্নে জানান, তাদের অঞ্চল ভাটি। সেখানে বোরো মৌসুমেই ধানের আবাদ হয়। আর সারাবছর পানিতে প্লাবিত থাকে। বোরো মৌসুমে তিনি দলীয়ভাবে মাঠে মাঠে কাজ করেন চুক্তিতে। এরপর নিজের বানানো বোম্বাই মিঠাই নিয়ে বাড়তি আয়ের আশায় চলে আসেন ঢাকায়।
তিনি বলেন, বাড়িতে বসে থাকা লস্। যা আসে, তা-ই লাভ। প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। সব খরচ করে দিনে ২০০ টাকা হাতে রাখা যায়।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় পূর্ব রাজাবাজারের কিছু শিশু ভিড় জমায় তার কাছে। বিভিন্ন কিছু বানিয়ে তাদের হাতে দিয়ে সামাদ বলছিলেন, বুচ্ছেন, এই গরিবের পোলাপানই আমার ১ নম্বর কাস্টমার। ওরাই আমারে বাঁচাইয়া রাখছে।
পরের জমিতে চুক্তিতে কাজ আর এই কাজ ছাড়া আমার ইনকামের আর কোনো রাস্তা নেই (সামাদ মিয়া)। এর মাধ্যমেই জীবন-যাপন করতে হয় সামাদ মিয়ার, তার স্ত্রী জরিনা, মেয়ে রোজিনার (১৯) ও ছেলে সজীবের (১৮)। রোজিনা গোপালপুরের একটি বিদ্যালয়ে দশম ও সজীব নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত বলে জানান সামাদ মিয়া। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম