নিরাপত্তা চেয়ে ১৬ দূতাবাসের চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে
দীপক চৌধুরী : নিজ নিজ দেশের নাগরিক ও তাদের কর্মস্থলের নিরাপত্তা চেয়ে সরকারকে ১৬টি দূতাবাস চিঠি দিয়েছে। তবে চিঠি দিলেও সরকার সকল বিষয়ে তাদের দাবি মেনে নিতে পারবে না। বিশেষ করে বেসরকারি বা প্রাইভেট নিরাপত্তাবাহিনীর জন্য অস্ত্র বহন ও ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবে না সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
একটি সূত্র জানায়, সার্বক্ষণিকভাবে পুলিশি পাহারা দিতে বাংলাদেশের প্রতি জাপানের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা (জাইকা) সরকারকে চিঠি দিয়েছে। তাদের ঢাকা কার্যালয় এবং সারাদেশের প্রকল্পগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে নিরাপত্তা চায়। এ ছাড়া দেশের যেসব স্থানে জাইকার প্রকল্প রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে প্রাইভেট নিরাপত্তাবাহিনীকে অস্ত্র দিতেও চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বিভিন্ন দূতাবাস প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছে। সরকারের তিনজন সিনিয়র কর্মকর্তা গতকাল রাতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, নিরাপত্তা চেয়ে ঢাকায় অবস্থিত জার্মানি, ডেনমার্ক, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, ইতালি, অস্ট্রিয়া ও থাইল্যান্ডসহ ১৬টি দূতাবাস থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের রাষ্ট্রদূতরা তাদের বাসভবনের নিরাপত্তা বাড়াতে বলেছে।
গুলশানের জঙ্গি হামলায় জাপানের সাত নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যা করার পর বাংলাদেশে নিজেদের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত তারা।
পুলিশের একটি তদন্ত সংস্থার একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর গুলশানে ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশে কর্ম ও ব্যবসার প্রয়োজনে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদের অনেকে কাজকর্ম করা থেকে বিরত রয়েছেন। তারা সাইট অফিসে যাচ্ছেন না। এমন কী কেউ কেউ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা চাইছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম-সচিব জানান, ইচ্ছা করলেই বিদেশি দূতাবাসের সব চাহিদা পূরণ করা যায় না। দেশি নাগরিকদের প্রাইভেট অস্ত্র বহন করার নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের থাকলেও বিদেশি কোনো দেশের হাইকমিশন ও দূতাবাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অস্ত্র বহনের অনুমতি দেওয়ার কোনো বিধান নেই। তবে আমরা তাদের নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানেও আমরা নিজেদের তাগিদে বিদেশি নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা বাড়িয়েছি।
জানা গেছে, দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কর্মরত বিদেশিরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। বিভিন্ন স্থাপনায় কর্মরত বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা গ্রহণে সরকারকে চিঠি দিয়েছে। এরই মধ্যে দুটি সরকারি বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেনের আইসোল্যাক্স গত ৪ জুলাই থেকে তাদের কাজ বন্ধ রেখেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কর্মরত বিদেশিদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের জ্বালানি খাতের বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রায় ৬০০ এবং বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ১৩ শ’ বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও স্পেনের নাগরিক বেশি। এছাড়া এসব প্রকল্পে অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও রয়েছেন। পাবনা জেলার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে রাশিয়ার নাগরিক কর্মরত আছেন। এটি এখন দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। পাবনা জেলা প্রশাসক রাশিয়ার নাগরিকদের নিয়ে বৈঠকে সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কাছে পরামর্শ চেয়েছেন।
বিদেশি দূতাবাসের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, আমরা দূতাবাসগুলো থেকে চিঠি পেয়েছি। আমরা পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তাদের চাহিদা ও আমাদের সামর্থ্য বিবেচনা করে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে।