নিষিদ্ধ ৪টিসহ দেশে ২৪টি জঙ্গি সংগঠন নাশকতায় লিপ্ত
আজাদ হোসেন সুমন : সরকারের নিষিদ্ধ ঘোষিত চারটিসহ কমপক্ষে ২৪টি জঙ্গি সংগঠনের ৫ শতাধিক সদস্য আত্মগোপনে থেকে নাশকতামূলক তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার তালিকাভুক্ত নিষিদ্ধ চারটি জঙ্গি সংগঠন হচ্ছেÑ হরকাতুল জেহাদ, জেএমবি, হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশ ও আনসারুল্লাহ বাংলাটিম। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক একাধিক এনজিও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের মদদে আরও কমপক্ষে ২০টি সংগঠন তৎপর রয়েছে।
অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলো হচ্ছেÑ ওয়ারত ইসলামিক ফ্রন্ট, জামায়াত আস সাদত, আল খিদমত, হরকত এ ইসলাম আল জিহাদ, মুসলিম মিলাত শরিয়া কাউন্সিল, ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ফ্রন্ট ফর জিহাদ, জইশ-ই-মোহাম্মদ, কালেমার দাওয়াত, ইসলামী দাওয়াতি কাফেলা, হিজবুল্লাহ ইসলামী সমাজ, হরকাত উল মুজাহিদীন বাংলাদেশ, নুসরাতুল মুসলেমিন, আল হারাত আল ইসলামিয়া, জামায়তুল ফালাইয়া, তাওহিদি জনতা, বিশ্ব ইসলামী ফ্রন্ট, জুমাতুল আল সাদাত, শাহাদাত-ই-নবুওয়াত, জামাত-ই-ইয়াহিয়া আল তুরাত, জইশে মোস্তফা বাংলাদেশ ও আল জিহাদ বাংলাদেশ।
তালিকাভুক্ত এ ২৪টি সংগঠনের মধ্যে বেশ কয়েকটি সংগঠন আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ। এরমধ্যে কয়েকটি সংগঠনের শীর্ষ ব্যক্তি দু-একবার গোপনে বাংলাদেশ সফর করেছেন বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। জামাত ইসলামের সহযোগী সংগঠন জামায়াত-শিবিরের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ উগ্রসন্ত্রাসবাদী তৎপরতায় লিপ্ত থাকার খবরও আছে গোয়েন্দাদের কাছে।
দেশে অরাজকতা ও নাশকতামূলক কর্মকা- পরিচালনা করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে সংগঠনগুলো অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, উল্লিখিত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। কঠোর নজরদারী আর অব্যাহত অভিযানের কারণে জঙ্গিরা সুবিধা করতে পারছে না। অভিযানের মুখে তারা শুধু স্থান পরিবর্তন করছে। যেখানেই তারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে সেখানেই হানা দিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
সূত্রের দাবি, এসব সংগঠনের অধিকাংশ সদস্যকেই ইতোপূর্বে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করেছে। কিন্তু আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে তারা আত্মগোপনে চলে গেছে। সূত্রমতে, মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক এনজিও জঙ্গি সংগঠনের আর্থিক সহায়তা ও মদদপুষ্ট এ দেশি জঙ্গিরা তাদের মিশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এদের বরাবরই রুখে দিচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে একাধিক জঙ্গি সংগঠনে রয়েছে সুইসাইডাল স্কোয়াড; যারা নিজের জীবন দিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। আর যারা আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় তাদের ঠেকানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
সূত্রের দাবি, স্বল্পোন্নত এই বাংলাদেশতো দূরের কথা ইন্টারন্যাশনাল কাউন্টার টেরোরিজম প্রতিষ্ঠাতা তথা উন্নত দেশগুলোতেও জঙ্গিদের সুইসাইডাল স্কোয়াডের সদস্যরা হামলে পড়ে কেড়ে নিচ্ছে শত শত প্রাণ। সিআইডি পুলিশের ডিআইজি কামালউদ্দিন আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশপাশি মিডিয়াকেও এ ব্যাপারে আরও সোচ্চার হতে হবে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে মত পার্থক্য ভুলে রাজনৈতিক সমঝোতাটাও জরুরি। এছাড়া সমাজে সচেতন অংশসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষের চোখ-কান খোলা রাখা উচিত। মোটকথা আত্মঘাতী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলেই দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা সম্ভব হবে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি