জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত হতে দেশের মানুষের বিপ্লবী পুনর্জাগরণ জরুরি
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশিক রহমান
এই মুহূর্তে আমাদের যে সংকট তা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন মানুষের পুনর্জাগরণ। সামাজিক, রাজনৈতিক আন্দোলনও সময়ের দাবি। জামায়াতে ইসলামী ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা জরুরি। সেটা আইনি বা নির্বাহী যে প্রক্রিয়াই হোক। যেসব মানুষ ভুল, বিভ্রান্তিকর ভাবাদর্শে আসক্ত, জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের সে পথ থেকে ফিরিয়ে আনা দরকার। তার জন্য প্রয়োজন জনগণের অংশগ্রহণমূলক একটা বিপ্লব। মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত হতে, গণতান্ত্রিক স্থিতিশীল বাংলাদেশ পেতে মানুষের বিপ্লবী পুনর্জাগরণ জরুরি। এর কোনো বিকল্প নেইÑ দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন রাজনীতিক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ও ক্ষেতমজুর সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি পরেশ কর।
তিনি বলেন, বিপ্লব ছাড়া কোনো অশুভ শক্তিকে তাড়ানো যায় না। বরং জনগণের ওপর তারা আরও চেপে বসে। অস্থিরতা তৈরি করে মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এখনকার শাসক দল আওয়ামী লীগেরও জনগণের ওপর বিশ্বাস নেই বললেই চলে। জনগণের ওপর তারা ভরসা রাখতে পারে না! অথচ জনগণের শক্তিই তাদের শক্তি বলে দাবি করে। যদি তাই হয়, তাহলে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন এককভাবে করল কেন? এ বিষয়ে উত্তর অনেক আছে তাদের। কিন্তু সঠিক জবাব নেই কারও কাছেই। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সাংবিধানিক ভিত্তি থাকলেও নৈতিক কোনো ভিত্তি কি রয়েছে এই সরকারের? নেই। নীতিহীন কোনো কিছুরই জোর থাকে না, মনোবল থাকে আপোসকামী। এই সরকারেরও আপোসকামী মনোবল। ফলে জঙ্গিবাদের আস্ফালন দেখছি আমরা।
তিনি আরও বলেন, অসাম্প্রদায়িত্ব চেতনায় বিশ্বাসী একটা রাজনৈতিক দল ছিল আওয়ামী লীগ, সেখান থেকে তারা এখন অনেকটাই সরে এসেছে। এখন যখন এই দলটি মৌলবাদীদের সঙ্গে আপোস করে, তখন কি মৌলবাদীরা জঙ্গি কর্মতৎপরতায় উৎসাহিত হয় না? আজকে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের যদি দেখেনÑ জামায়াত-ছাত্রশিবির যতটা না সাম্প্রদায়িক, অনেকটা তাদের মতোই সাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা! আওয়ামী লীগ দল হিসেবে তার যে চরিত্র ছিল, তা ধীরে ধীরে রূপান্তিরত হয়ে অনেকটা বিএনপির মতো রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে। অনেকেই বলে থাকেন, বিএনপিকে হারানোর জন্য রাজনৈতিক কৌশলী হয় আওয়ামী লীগ। এটা যে কত বড় ভুল, তা তারা বুঝতে চাইছে না।
তিনি আরও বলেন, দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংকট আরও বাড়বে। কারণ আংশিক গণতন্ত্র দিয়ে আপনি গণতন্ত্রের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে সচল করতে পারবেন না। গণতন্ত্র পরে ও উন্নয়ন আগেÑ এই সেøাগানও ভুল। কারণ গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একেঅপরের পরিপূরক। আংশিক গণতন্ত্র চর্চায় একটা শূন্যতা তৈরি হয়। এর ফলে নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। যেমনটি এখন ঘটছে সমাজে, রাষ্ট্রের মধ্যে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন দেশে যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে আওয়ামী লীগের পরিবর্তে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে অনেক ভালো করবেÑ এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। এমনটি ভেবেও মানুষ বিএনপিকে সমর্থন করছে না। সমর্থন করছে, বিকল্প না থাকার কারণে। যেহেতু মানুষ বিকল্প পাচ্ছে না, সেই জায়গা থেকে তারা মনে করছেÑ আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় রাখা উচিত নয়।
আজকের তরুণদের অনেকেই নর্থ সাউথ, স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থী। সেখানে কারা পড়েÑ সাধারণত বিত্তবান ও মেধাবীরা। আজকের তরুণেরা কি দীক্ষা নিচ্ছে? জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, সন্ত্রাবাদের দীক্ষা নিচ্ছে। সে পথেই তারা হাটছে। আজ তো সঠিক দীক্ষাটা তরুণদের মধ্যে নেই। সেই দীক্ষার জায়গাটা সংকুচিত হয়ে গেছে। তার ফলেই অশুভ শক্তির ছায়া তাদের প্রভাবিত করছে। অন্ধকারের পথেই তারা ধাবিত হচ্ছে। যা স্বাধীন বাংলাদেশ, বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন