সাভারে ৬ ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা হুমকির ভয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন না সাক্ষিরা
মামুন খান : সাভারের আমিনবাজারে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পাঁচ বছর পূর্ণ হলেও মামলাটির বিচার এখনো শেষ হয়নি। হুমকির ভয়ে মামলার অধিকাংশ সাক্ষিই আদালতে সাক্ষ্য দিচ্ছেন না। এমনকি ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে প্রাণনাশের হুমকিতে চরম আতঙ্ক ও হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন নিহতদের পরিবার।
২০১১ সালের ১৭ জুলাই সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলাচরে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিষ্ঠুর এই হত্যাকা-ের মামলায় যেন অভিযুক্তদের উপযুক্ত সাজা হয় সেদিকেই তাকিয়ে আছে নিহতদের পরিবার।
ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রফিকুল ইসলামের আদালতে মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন। মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামীকাল ১৮ জুলাই দিন ধার্য রয়েছে।
মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর শাকিলা জিয়াছমিন (মিতু) বলেন, ‘মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। এ পর্যন্ত ৪২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন করেছেন আদালত। সাক্ষীদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এজন্য সাক্ষিরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসায় মামলার বিচারকাজ বিলম্ব হচ্ছে। মামলার গুরুত্বপূর্ণ অনেক সাক্ষিই এখনও সাক্ষ্য দেননি। আমরা চাই চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হোক।’
ওই ঘটনায় নিহত কামরুজ্জামান কান্তর বাবা আব্দুল কাদের সুরুজ বলেন, ‘এদিনটি আসলেই ছেলের শোকে কাতর হয়ে যায় তার মা। সারাক্ষণ কান্না করে আর আল্লাহর কাছে বিচার চায়। আমার ছেলের নামে ডাকাতির মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে সত্য ঘটনা উদঘাটন হয়েছে। সরকারই (রাষ্ট্র) যখন মামলার বাদি তাই বিচারের আশায় সরকারের দিকেই তাকিয়ে আছি।’
কামরুজ্জামানের বাবা আরও বলেন, ‘সত্য উদঘাটনের পর আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। অজ্ঞাত পরিচয়ে টেলিফোনে আমাকে বলা হয়, আমি যদি সাক্ষি দিতে যাই তাহলে আর আদালত থেকে বাসায় ফিরতে পারব না। একইভাবে নিহত অন্যান্য ছাত্রদের পরিবারের সদস্যদেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর দারুসসালাম থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ওই সময় নিহত অন্যান্য ছাত্রদের অভিভাবকরাও উপস্থিত ছিলেন। থানায় জিডির পর আমাকে আবারও প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে জামিনে থাকা আসামি সাব্বির আহমেদ পর্বত ও তার দলবল। এসব হুমকি-ধামকি দেওয়ার আগে নিয়মিত মামলার খোঁজ-খবর নিতাম। হুমকির পর থেকে আর আদালতে যাই না। নিরাপত্তার অভাবে সাক্ষীও দিতে যাইনি। আসামিদের ভয়ে এ মামলায় অনেকেই আদালতে সাক্ষী দিতে যাচ্ছে না।’
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবেবরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলাচরে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেনÑ ধানমন্ডির ম্যাপললিফে ‘এ’ লেভেলের ছাত্র শামস রহিম শাম্মাম, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল, বাঙলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান পলাশ, তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা প্রথম বর্ষের ছাত্র টিপু সুলতান, মিরপুরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সিতাব জাবীর মুনিব এবং বাঙলা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র কামরুজ্জামান কান্ত।
নিহতদের সঙ্গে থাকা বন্ধু আল-আমিন গুরুতর আহত হলেও পরে প্রাণে বেঁচে যান। ঘটনার পর কথিত ডাকাতির অভিযোগে বেঁচে যাওয়া আল-আমিনসহ নিহতদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একটি ডাকাতি মামলা করেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী আবদুল মালেক। ওই সময় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা গ্রামবাসীকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা করে। এ মামলায় ১৪ আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা