টুইটারে আইএস জঙ্গিদের ক্ষুদ্র এক ভয়ঙ্কর বার্তা
রাশিদ রিয়াজ : গত ২১ মে আইএস জঙ্গিদের পক্ষ থেকে টুইটারে তাদের অনুসরণকারী কিংবা সমর্থকদের এক ক্ষুদ্র অথচ ভয়ঙ্কর বার্তা দিয়ে বলা হয়, যে যেভাবে হোক হামলা কর। অস্ত্র দিয়ে হোক, গাড়ি নিয়ে হোক এমনকি পাথর ছুড়ে মাথা থেঁতলে এ ধরনের ভয়ঙ্কর হামলা করার ঘৃণ্য হামলার কথা বলা হয় ওই আহ্বানে। টুইটার বার্তায় এক মিনিটের কিছু বেশি সময়ে ওই অডিও বার্তায় বলা হয় হামলা করতে হবে আমেরিকানদের উপর। আইএস মুখপাত্র আবু মহম্মদ আল আদনানি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে টুইটারে ওই বার্তায় সে জানায়, ‘আমাদের এখন গেরিলা আক্রমণের উপর জোর দিতে হবে।’ আইএস মনোভাবাপন্ন যুবকদের প্রতি তার আহ্বান ‘যখন যেখানে শত্রু নিকেশের সুযোগ পাবে তখন সেখানেই হামলা চালাও।’
আইএসের হামলায় পশ্চিমা দেশ শুধু নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হামলার আহ্বান জানানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত রমজান মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ড, তুরস্কের ইস্তাম্বুল, ঢাকার গুলশান, সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্ত, ইরাকের মসুলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলায় শত শত মানুষ মারা যায়। আহত হয় সহস্রাধিক।
টুইটারে ওই হামলার আহ্বান জানিয়ে আদনানি বলেন, ‘রমজান মাস হচ্ছে জিহাদের ও বিজয়ের। প্রস্তুতি নাও, তৈরি হও। এ মাসকে অবিশ্বাসীদের জন্যে সর্বত্রই অমঙ্গলজনক হিসেবে পরিণত কর। খিলাফতের বিশ্বাসীরা বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকায় আঘাত হান। আইএস সমর্থকরাও আঘাত হান, আঘাত হান সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে।’
আহ্বানে আরও বলা হয়, ‘তাদের (অবিশ্বাসীদের) ভূখ-ে ক্ষুদ্রতম একটি হামলাও তুমি করতে পার, তাহলে তাও ভালো এবং আমাদের সঙ্গে থাকার চেয়েও তোমার ওই হামলা বরং অধিক কার্যকর। তোমাদের কেউ যদি আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আসতে চাও বরং তার চেয়ে মনে রেখ আমরা তোমার পাশেই আছি। আমরা ধর্মদ্রোহীদের দিনে ও রাতে নির্মূল করতে সচেষ্ট। অবিশ্বাসীরা সামরিক না বেসামরিক, নারী কিংবা পুরুষ তার কোনো পার্থক্য করি না’।
বিশ্বের মুসলমানরা যখন রমজান মাসে সিয়াম সাধনা করেছে, তখন আইএস মুখপাত্র আদনানী তার টুইটার বার্তায় আহ্বান জানান, ‘তোমাদের প্রত্যেকে প্রতিটি হামলা খোদার নামে আঘাত হানার জন্যে নিশ্চিত কর। খোদার ইচ্ছায় অবিশ্বাসীদের জন্যে তাদের সময় অমঙ্গলজনক করে দাও। অত্যাচারী শাসকদের উপর হামলা কর। তাদের চেহারা উম্মোচন করে দাও। শাসনকর্মের জন্যে তাদেরকে দুঃখ প্রকাশ করতে বাধ্য কর। তাদের প্রতিটি মুহূর্তকে ভীতিকর করে দাও, যতক্ষণ না তারা একজন আরেকজনকে ভীতিজনক মনে না করে’।
টুইটারে আইএস মুখপাত্রের এ ধরনের আহ্বানের পর একের পর এক হামলায় ধরা পড়ছে ‘লোন উল্ফ’ তথা ‘একক জঙ্গির’ কার্যকলাপের চিত্র। এখন এক বা একাধিক জঙ্গি নিজেদের উদ্যোগেই হামলা চালাচ্ছে। তাদের সঙ্গে সংগঠনের কোনো সরাসরি যোগ নাও থাকতে পারে। সোস্যাল মিডিয়ায় আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠনের প্রচারে প্রভাবিত হচ্ছে অনেকে। হামলার পরে কৃতিত্ব নিচ্ছে আইএস।
‘কখন’ এবং ‘কোথায়’ এ ধরনের হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে আদনানি কোনো সুস্পষ্ট কিছু না বলায় যে কোনো দেশ এখন এ ধরনের জঙ্গি হামলার হুমকির মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। আইএসের এমন আহ্বানে অনেকে জঙ্গি হামলায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ ধরনের হামলা ঘটিয়েছে বিভিন্ন দেশে। ফ্রান্সে ট্রাক নিয়ে বাস্তিল দিবসে আতসবাজিতে এমন হামলার পেছনে আইএসের সেই হামলার আহ্বানও একটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে কখন কোন দেশে এ ধরনের হামলা হতে পারে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন গোয়েন্দারা। রয়টার্স থেকে নেওয়া