জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সুজনের মানববন্ধন জঙ্গিদের মতের বিপক্ষে সুচিন্তিত ও বিকল্প ন্যারেটিভ বা প্রস্তাবনা দাঁড় করাতে হবে
রিকু আমির : জঙ্গিবাদ নিরসনে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি কাজ করছে না মন্তব্য করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, শুধু শক্তি প্রয়োগ করে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করা যাবে না। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে এবং জঙ্গিদের মতের বিপক্ষে সুচিন্তিত ও বিকল্প ন্যারেটিভ বা প্রস্তাবনা দাঁড় করাতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, তাদের মত ঠিক নয়।
গতকাল শনিবার সকালে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ বিষয়ে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, জঙ্গিরা কারও বন্ধু হতে পারে না, তারা মানবতার শত্রু। এ নিয়ে রাজনীতি করলে তার পরিণতি ভালো হবে না’। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বিপথগামীদের সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের আরও পরামর্শ ‘যারা বিপথগামী, তাদের ওপর বলপ্রয়োগ না করে তাদের মতের বিপক্ষে উচ্চতর যুক্তি দাঁড় করানো উচিৎ।
জঙ্গিবাদের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা নিজেদের নির্যাতিত মনে করে। এছাড়া আমাদের বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে, যা জঙ্গিবাদের উত্থানের পেছনে উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করছে।
জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সুজনের পক্ষ থেকে আটটি দাবি উপস্থাপন করা হয় মানববন্ধন থেকে। এসব হচ্ছে- অবিলম্বে জঙ্গিবাদী অপতৎপরতা কঠোর হাতে দমন করো, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলো, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে অবিলম্বে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলো, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে অবিলম্বে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক শক্তির জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলো, উদার, সহিষ্ণু ও বহুত্ববাদী সমাজ গঠনে উদ্যোগী হওয়া, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণসহ রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করো, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ও হয়রানি বন্ধ করাসহ গণতান্ত্রিক অধিকার সমুন্নত রাখো, অবিলম্বে বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- বন্ধ করো এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও।
‘জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও শান্তি সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক শক্তির জাতীয় ঐক্য চাই’ ব্যানারে আয়োজিত সুজনের মানববন্ধনে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, জঙ্গিবাদ এখন দলীয়বাদ বা গোষ্ঠীগত সংকট নয়, আন্তর্জাতিক সমস্যা। জঙ্গিবাদ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকপর্যায়ের মানবতা বিপন্ন করে চলেছে। এটি মোকাবিলায় ধর্মীয় বিষয়ে আমাদের সহিষ্ণু হতে হবে। ধর্মকে আঘাত করে কোনো কথা বলা যাবে না।
বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, শুধু বাংলাদেশেই নয়, উন্নত-অনুন্নত সব দেশেই জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটেছে। শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের একার পক্ষে এর মোকাবিলা সম্ভব হবে না। এজন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ও জনগণের একাত্মতা।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যা। কিন্তু এখানে জঙ্গিবাদকে রাজনৈতিক আবরণ দেওয়া হচ্ছে। মতবাদ সমস্যা না। মতবাদ যখন সশস্ত্র রূপ নেয়, তখন এটা জঙ্গিবাদ হয়ে যায়। তাই এর বিরুদ্ধে শুধু বলপ্রয়োগ করে সমাধান সম্ভব না। দেশে সুস্থ রাজনীতি নেই, সংস্কৃতি নেই। এ জন্য তরুণরা বিপথে যাচ্ছে।
গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জঙ্গিবাদও একধরনের প্রতিবাদ। তবে এটার পথ ভিন্ন। সশস্ত্র। জঙ্গিবাদ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন গণতন্ত্র ও সুশাসন।
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে সুজন সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন, জাতীয় কমিটির সদস্য মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, জাসদ (রব)-এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমদ, হুমায়ূন কবির হিরু, সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি, শাহজাহান মন্টু, রঘুনাথ রাহা, ক্যামেলিয়া চৌধুরী, আবুল হাসনাত, মোহাম্মদ সেলিম, মাহবুব আক্তার, মোস্তাফিজুর রহমান শাহীন প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করেন। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম