কোলাহলমুক্ত নীরব গুলশান ৭৯ নম্বর সড়ক
ইয়াছিন রানা : গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কটি স্বাভাবিকভাবে কোলাহলমুক্ত নিরব থাকলেও স্প্যানিশ রেস্তোঁরা হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে কোলাহলে ভরপুর হয়ে উঠে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য, সাংবাদিকদের ভিড় এবং কৌতূহলী মানুষে ভিড়ে ভরপুর হয়ে উঠে ৭৯ নম্বর সড়ক।
রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার ১৫ দিন পর এখন ঠিক আগের সেই কোলাহল মুক্তরূপে ফিরে গেছে রাস্তাটি। হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁটি কোলাহলমুক্ত ও প্রাকৃতিক পরিবেশে সুন্দর খাবারের ব্যবস্থা থাকার কারণে অনেকেই কিছুটা নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য খেতে আসতেন এখানে। কিন্তু হামলার পরে সেই নিরিবিলি পরিবেশ প্রচ- রকমের উত্তেজিত হয়ে আবারও যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।
হলি আর্টিজানে নিরিবিলি পরিবেশের কারণে খেতে আসতেন তপন হালদার। রেস্তোরাঁয় ঘটনার পর এবং গতকালও এসেছিলেন তিনি। ভিতরে যেয়ে দেখতে চেয়েছিলেন কিন্তু অনুমতি না থাকাতে যেতে পারেননি। তিনি বলেন, পরিচিত স্থানে এমন হামলায় নিজের নিরাপত্তা নিয়েও এখন চিন্তিত থাকি আমি।
তবে এখনও এ রাস্তায় যাওয়ার সবগুলো রাস্তাতেই পুলিশের সতর্ক প্রহরা আছে। বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে রয়েছে পুলিশের চৌকি। আর হলি আর্টিজান বে?কারি যাওয়ার গলির মুখে রাখা আছে তার কাঁটার ব্যারিকেড। অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া কাউকেই যেতে দেওয়া হচ্ছে না ভেতরে। তারপরও উৎসুক মানুষ রেস্তোরাঁয় ঢোকার মুখে দাঁড়িয়ে সামনে তাকিয়ে থাকেন। যেখানে পুলিশের ব্যারিকেড সেখানে এসে ভেতরের অবস্থা জানতে চান।
কর্তব্যরত পুলিশের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেকারির ভেতরে অনেক খাবার ছিল যা পরিষ্কার না করার কারণে ভেরতে পঁচা দুর্গন্ধ তৈরি হয়েছে। সেজন্য আমরাও বেশি একটা রেস্তোরাঁর ভিতরে যাই না।
এদিকে হলুদ রঙের ব্যারিকেডের উপরে ১ জুলাইয়ের জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মরণে বেশ কিছু কাগজের প্ল্যাকার্ড ঝোলানো আছে। বৃষ্টিতে ধুয়ে লেখাগুলো বেশ অস্পষ্ট হয়ে গেছে। কিছু আবার ছিঁড়েও গেছে। তবে ডিজিটাল ব্যানারগুলো এখনও আছে ভালোভাবেই। একটিতে লাল হরফে লেখা, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমরা তোমাদের সঙ্গেই আছি।’
ব্যারিকেডের সামনে রাখা ফুলগুলো এখন কিছুটা মলিন হয়ে এসেছে। গাঁদা আর গোলাপের পাঁপড়িগুলোতে লেগেছে তামাটে রং। ঘটনার পর থেকে প্রতিদিনই একটির উপর আরেকটি ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর কারণে এবং ফুলের পাঁপড়ি ঝরে স্তূপের উপর স্তূপ পড়ে গেছে। তবে মলিন হয়ে যাওয়া ফুলগুলোর ভিড়ে তাজা ফুলও পাওয়া গেল। দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা বললেন, একজন জাপানি নাগরিক সকালে এসে দিয়ে গেছেন।
হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর সামনে দায়িত্বরত এসআই মো. মেহেদী হাসান বলেন, ঘটনার পর থেকেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষ আসছে। এখন ?আগের চেয়ে কম মানুষ আসছেন। বিদেশি নাগরিকরাও আসছেন। আর আসছেন উৎসুক কিছু মানুষ। তবে সাধারণ মানুষের সেই ভিড় আর আগের মতো নেই।
১ জুলাইয়ের ওই জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশি, তিনজন বাংলাদেশি ও দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। পরে কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও রেস্তোরাঁর এক কর্মী নিহত হন। ১৭ জন বিদেশি নাগরিকের মধ্যে নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি ও একজন ভারতীয় নাগরিক। সম্পদনা : হাসান আরিফ