মঙ্গোলিয়ায় আসেম শীর্ষ সম্মেলনে নেতাদের ঘোষণা ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাস মোকাবিলার অঙ্গীকার
দীপক চৌধুরী : এশিয়া ও ইউরোপীয় দেশসমূহের জোট- আসেম নেতারা সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদ ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার অঙ্গীকার করেছেন। জোটের সদস্য দেশসমূহের জনগণের স্বার্থে এবং সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ অভিমত ব্যক্ত করেন তারা।
শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনি দিনে গৃহীত উলেনবাটর ঘোষণায় নেতারা বলেন, অনানুষ্ঠানিক সংলাপের বাস্তব ফল লাভ হয় এমন উদ্যোগসমূহ অব্যাহত রাখা নিশ্চিত করতে হবে। এর মাধ্যমে আসেম সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমন, সমুদ্র নিরাপত্তা, সাগরে জলদস্যুতা ও সশস্ত্র ডাকাতি বন্ধের পাশাপাশি মানব ও মাদকপাচার, সাইবার নিরাপত্তা ও সাইবার অপরাধের মতো অভিন্ন স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেবে আসেম। সূত্র : বাসস
গতকাল সকালে উলেনবাটরে অনুষ্ঠিত আসেম শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনি অধিবেশেনে আসেম জোটভুক্ত দেশগুলোর নেতারা, ইউরোপীয় কাউন্সিল এবং ইউরোপীয় কমিশন ও এশিয়ান সচিবালয়ের নেতারা এ ঘোষণা দেন। অধিবেশনে অন্যান্য আসেম নেতৃবৃন্দের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
ঘোষণায় আসেম সদস্য দেশসমূহের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানগণ এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে যোগাযোগ, পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতা আরও বৃদ্ধির ঘোষণা দেন।
তারা ঘোষণায় জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতি সমুন্নত রাখতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া এবং আইনের শাসন ও আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার, দুর্নীতি দমন, মাইগ্রেশন, টেকসই উন্নয়নবিষয়ক ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।
তারা বলেন, ভবিষ্যতে অবৈধ মৎস্য শিকার, শিক্ষা, দারিদ্র্য নিরসন, ব্লু অর্থনীতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উদারিকরণ এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইনোভেশন, পরিবহন, এমএসএমইএস সহযোগিতা, সকল সেক্টরে সক্ষমতা বৃদ্ধ, কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়ন, যুব ও প্রতিবন্ধীসহ পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং ম্যানেজমেন্ট, খাদ্য, পানি ও জ্বালানি নিরাপত্তা, স্থল ও সমুদ্রসম্পদ অধিক গুরুত্ব পাবে।
আসেম নেতৃবৃন্দ বলেন, এ ক্ষেত্রে দুই অঞ্চলের পারস্পরিক স্বার্থে আসেম কর্মকা-ে জনগণের সম্পৃক্ততা বিশেষ করে যুব ও ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে আমরা মতবিনিময়ের মাধ্যমে সকল প্রকার সহযোগিতার উদ্যোগ নিতে হবে।
ঘোষণায় আরও বলা হয়, আসেমে উন্নয়ন বৈষম্য কমিয়ে আনতে এবং জোটের উন্নয়ন অংশীদারদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতা ও সমন্বয় করতে হবে।
ঘোষণায় আসেম নেতৃবৃন্দ জনগণের টেকসই ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে এবং শান্তিপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করতে ও বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সমৃদ্ধি অর্জনে সমস্যা সমাধানে দৃঢ়অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
আসেমের ২০তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কীর অনুষ্ঠানে নেতারা ২০০৬ সালের আসেমের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে হেলসিংকি ঘোষণা স্মরণ করে একে অন্যের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও প্রত্যাশা সদস্য দেশসমূহের মধ্যে তুলে ধরতে অনানুষ্ঠানিক, নেটওয়ার্কিং এবং ফ্লেক্রিজিবিলিটির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ঘোষণায় আরও বলা হয়, নেতৃবৃন্দ অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে বৃহত্তর যোগাযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করে আসেম কর্মকা-কে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।
এ প্রসঙ্গে নেতারা মতৈক্যের ভিত্তিতে সমঅংশীদারিত্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে আসেম কর্মকা-কে গতিশীল করার অঙ্গিকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আসেম কর্মকা- তৃতীয় দশকে সফল পদার্পণে নেতৃবৃন্দ এশিয়া-ইউরোপ কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক (এইসিএফ) ২০০০ এবং অন্যান্য দলিলপত্রে আউটলাইন্ড হিসাবে অনানুষ্ঠানিক রাজনৈতিক আলোচনা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের মাধ্যমে অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
তারা বলেন, বিশ্বে ভৌগোলিক পরিবর্তনে ব্যাপক অনিশ্চয়তা এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। ঘোষণায় বলা হয়, আসেম একটি কার্যকর জোটবদ্ধতা ও আইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা কার্যকর করার অনুঘটক হিসাবে ভূমিকা জোরদার করবে।
ঘোষণায় আরও বলা হয়, আসেম এশিয়া-ইউরোপের মধ্যে বহুমাত্রিক ও গণমুখী অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করবে। পাশাপাশি আসেম শান্তি ও স্থিতিশিলতা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, টেকসই উন্নয়ন ও উন্নত জীবন যাত্রার জন্য অংশীদারিত্বের মূল তিনটি ভিত্তির সবকটিতে আমাদের জনগণের চাহিদা ও প্রত্যাশা পূরণে একটি ভারসাম্য নিয়ে আসবে।