মোহাম্মদ আলী বোখারী ষ টরন্টো থেকে ভিক্টোরিয়াস প্রেসিডেন্ট এরদোগান!
‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’Ñ একথার যথার্থ পরিপূরণ ঘটালেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। এই প্রথম সামরিক অভ্যুত্থানসংকুল দেশটিতে তার আহবানে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে এবং একদিনেরও কম সময়ে বিপদগামী সেনাবাহিনীর বিদ্রোহের অবসান ঘটিয়ে তার সরকারের নিয়ন্ত্রণকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে।
গত শুক্রবার ওই অভ্যুত্থানের সময় প্রেসিডেন্ট এরদোগান কৃষ্ণ সাগরীয় রিসোর্ট মারমারিসে অবকাশ যাপনে ছিলেন। তিনি অভ্যুত্থানের খবর পাওয়া মাত্রই তা দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধের নির্দেশ দেন এবং নিজে রাত পেরিয়ে যাওয়ার আগেই রাজধানী আঙ্কারায় ফিরে আসেন। ফিরে আসার আগে তিনি তার সমর্থকদের সেলফোনে টেক্সট ম্যাসেজ পাঠিয়ে আহবান করেন- ‘দেশ ও জাতির গৌরবের জন্য রাজপথে নামুন এবং গণতন্ত্র ও শান্তির জন্য এ অভ্যুত্থান রুখে দিন’।
অথচ রাতেই সামরিক বাহিনীর একটি অংশ দাবি করেছিল, তারা দেশের সব নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। এমনকি তারা সারা দেশে সামরিক আইন ও কারফিউ জারিসহ ইস্তাম্বুলের কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরে ট্যাংক মোতায়েন করে, পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে গোলাবর্ষণ করে এবং সেনাপ্রধান হুলসি আকারকে পণবন্দি করে। এছাড়াও আঙ্কারার আকাশে সামরিক বিমান উড়ায়।
পরিণতিতে ঘটলো ১৬১ জনের প্রাণহানি, ২,৮৩৯ বিদ্রোহী সেনাসদস্য গ্রেফতার, ১,১৪০ আহত এবং পুলিশের কাছে ২০০ বিদ্রোহী সেনাসদস্যের আত্মসমর্পণ। যদিও এ সময়টায় একটি মাত্র বিমানঘাঁটি বিদ্রোহীরা দখলে রেখেছিল এবং মধ্যমসারির ৮ জন বিদ্রোহী সেনাকর্মকর্তা একটি হেলিকপ্টারে করে পার্শ্ববর্তী গ্রিসে পালিয়ে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছে।
তবে এ ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের লক্ষণীয় দিকটি হচ্ছেÑ প্রেসিডেন্ট এরদোগান আঙ্কারায় ফিরেই যুক্তরাষ্ট্রের পেনসেলভেনিয়ায় আশ্রিত ধর্মীয় ইমাম ফেতুল্লাহ গুলেনের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘দেশ ও জাতির প্রতি যে বিশ্বাসঘাতকতা দেখিয়েছেন, সাহস থাকলে দেশে ফিরে আসুন; এই দেশকে আপনারা ধ্বংসস্তূপ বানাতে পারেন না’। অবশ্য গুলেন এক বিবৃতিতে সেই অভিযোগটি তাৎক্ষণিক অস্বীকার করেছেন। তা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট এরদোগান সরকারের ৫২ শতাংশ সমর্থন সবটাই এই অভ্যুত্থান প্রতিহত করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের অধিকাংশ দেশই তার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। আর এই পুনর্ব্যক্ত করার পশ্চাতে রয়েছে ২০১৪ সালে এরদোগানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতারোহন এবং তারও আগে ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল অবধি দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন। বলতে গেলে, ন্যাটোভুক্ত ইউরোপীয় দেশ হিসেবে তার শাসনামলে তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যে ‘পাওয়ার হাউস’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং অপরাপরের তাতে ঈর্ষারও কমতি নেই। কেননা আগাগোড়াই তিনি রক্ষণশীল ইসলামপন্থি।