তুরস্কে এই প্রথম ব্যর্থ অভ্যুত্থান
এম কবির : তুরস্কের ইতিহাসে ১৫ জুলাই সেনাঅভ্যুত্থানের চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। এর আগে, বেশ কয়েকবার বড় ধরনের অভ্যুত্থানের শিকার হয়েছিল দেশটি। এবারের চেষ্টা ব্যর্থ হলেও আগে এমন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন বেশ কয়জন সেনাপ্রধান। ৫০ বছরে ৪ বার তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে।
কোয়াটর্জ-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেশটির আগের অভ্যুত্থানের ইতিহাস তুলে ধরা হলো-
২৭ মে, ১৯৬০ : তুরস্কের মহান নেতা কামাল আতাতুর্কের মৃত্যুর পর দেশটিতে অস্থিরতা বিরাজ করছিল। ওই সুযোগে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনোরেল গুরসেল ঘোষণা দেন, তুরস্কে সুষ্ঠু, পরিষ্কার ও সত্যিকারের গণতন্ত্রে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা অভ্যুত্থান করছি। তিনি বলেন, এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত একটি সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। তবে গুরসেল এরপর ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন।
১২ মার্চ, ১৯৭১ : দেশটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে সে সময়কার সেনাপ্রধান মেমদুহ সেনা অভ্যুত্থানের ডাক দেন। এবার সরাসরি সেনা অভ্যুত্থান না হলেও ভিন্ন আঙ্গিকে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। তৎকালিন সরকারকে একটি শক্তিশালী এবং গ্রহণযোগ্য সরকারের আল্টিমেটাম দিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। ঘটনার ধারাবাহিকতায় তাকে পদত্যাগ করানো হয় এবং ৭৩ সাল পর্যন্ত সেনা সরকার ক্ষমতা দখল করে রাখে।
১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৮০ : ১৯৭৩ সালের পর তখনও তুরস্কে সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসেনি। এরই মধ্যে আবার ১৯৭৯-এর শেষের দিকে কিছু উচ্চ পদবীর কর্মকর্তা অভ্যুত্থানের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা ৮০ সালের মার্চে অভ্যুত্থানের সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারে সেপ্টেম্বর-এ। ১২ তারিখে দেশটির জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলে সেনা অভ্যুত্থান এবং সারাদেশে মার্শাল ল-এর ঘোষণা করা হয়। দেশটির সংবিধানে পরিবর্তন এনে ১৯৮২ সালে একটি গণভোটের আয়োজন করা হয়। যেখানে ৯২ শতাংশ ভোটের ভিত্তিতে কেনান এভরান যিনি ওই অভ্যুত্থানের নেতা ছিলেন তাকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী ৭ বছর তিনি ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন।
২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ : ‘পোস্টমডার্ন ক্যু’ নামে অভিহিত এই অভ্যুত্থানে আরও একবার দেশটিতে সেনারা কর্তৃত্ব দখল করে। ওই বছর রাজনীতি এবং ইসলামের সংঘর্ষ দেশটির অস্থিরতা ক্রমাগত বাড়াতে থাকে। সরকার কিছু ধর্মভিত্তিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে এবং হিজাব পড়া নিষিদ্ধ করে। এমন কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী সরকারের পদত্যাগে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। এভাবে ১৯৯৮ সালে সেনা সরকার আবারও ক্ষমতায় আসে।
একই বছর এরদোগান, তখন তিনি ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন এবং পরে ৫ বছরের জন্য রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে তিনি জেলে যান। ১৯৯৯ সালে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
৯ অক্টোর ২০১৩ : তুরস্কে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর সাবেক তিন শীর্ষ কর্মকর্তার শাস্তি বহাল রাখা হয়েছে। তবে কয়েকজন নিম্নপদস্থ কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আঙ্কারার একটি আপিল আদালত এই রায় দেন।
মামলায় বলা হয়, ২০০৩ সালে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর তিন শীর্ষ কর্মকর্তা ইসলামপন্থী দলের সরকার সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হলেও ২০১০ পর্যন্ত তা আড়ালেই থেকে যায়। ২০১০ সালে তুরস্কের তারাফ সংবাদপত্র ওই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রকাশ করে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে এরদোগান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। যিনি এখনো তুরস্কের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৬ সালে ১৫ জুলাই সর্বশেষ সেনা অভ্যুত্থানটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। প্রেসিডেন্ট এরদোগান এখন সারাদেশে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছেন। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ