৫ শতাধিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দেশে নাশকতার শঙ্কা
আজাদ হোসেন সুমন : নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জেহাদ, জেএমবি, হিজবুত তাহরির ও আনসারুল্ল্হা বাংলাটিমসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৫ শতাধিক জঙ্গি সক্রিয় রয়েছে। আত্মগোপনে থেকে তারা নাশকতার পরিকল্পনা করছে বলে আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
সূত্রমতে, হিজবুত তাহরিরের সমন্বয়কারী মওলানা মুহিউদ্দিন, হরকাতুল জেহাদের আঞ্চলিক নেতা আনিসুজ্জামান রাজিব ও ২০০৫ সালে দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা মামলার আসামি জেএমবি নেতা এম এ সিদ্দিক ওরফে বাবলুসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ৫ শতাধিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি আত্মগোপনে থেকে সক্রিয় রয়েছে বলে তথ্য ুরয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। শীর্ষ এই ৩ নেতা ছাড়াও পলাতক অন্য জঙ্গিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছে- রাজশাহীর মুসা ওরফে মোস্তাফিজুর রহমান, এনামুল হক মনি, আবু সাঈদ, রাজবাড়ীর হাফেজ আলী ইয়াস আহম্মদ, ফরিদপুরের আবদুল গাফফার, তোফাজ্জল হোসেন, খলিলুর রহমান, মতুর্জা, তরিকুল ইসলাম মোল্লা, নারায়ণগঞ্জের রায়হান ওরফে ওবায়েদ, পল্টু ওরফে আশিক, মওলানা আকবর হোসেন, মাওলানা শফিকুর রহমান, মাওলানা ইদ্রিস আহম্মদ, মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম, হাফেজ জাহাঙ্গীর বদর, মাওলানা আবদুর রহমান, জামালপুরের রাবেয়া বেওয়া, নরসিংদীর মোস্তফা কামাল, গোপালগঞ্জের এনায়েত উল্লাহ, বোরহান উদ্দিন মাসুম, ময়মনসিংহের সাইফুল ইসলাম, গাজীপুরের আদম আলী, কাউসার আলী, জয়দেবপুরের এম এ সিদ্দিকী, শহিদুল্লাহ, আল আমিন ওরফে আবদুল্লাহ, টাঈাইলের মাসুম ওরফে আবদুর রউফ, বাগমারার জাকির হোসেন, আমানউল্লাহ আমান ওরফে সাইদুজ্জামান, কুষ্টিয়ার আবু সাঈদ শেখ, ঢাকার উত্তরখানের মোহাম্মদ রাসেল, সগীর হোসেন, ছগির হোসাইন, খিলগাঁওয়ের সোহাগ তালুকদার, তুরাগের হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদপুরের মাওলানা ইদ্রিস আলী (হুজি), উত্তরার ছাগির হোসেন, সাভারের রবিউল ইসলাম, আশুলিয়ার হাফেজ বিল্লাল, ধামরাইয়ের ইয়াকুব আলী, নুরুল ইসলাম, আবদুল আলিম, নজরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, আবদুল ওয়াব, আশুলিয়ার ফারুক হোসেন, মির্জাপুরের রাফি ওরফে কাফি, দিনাজপুরের মীর মোশারফ হোসেন, আজিমত, আরিফ ওরফে আলাল, রাশিদুল ইসলাম, চাঁদপুরের আবু জিহাদ, খাগড়াছড়ির বেলাল আহম্মেদ, যশোরের সাইফ ওরফে আসাদুজ্জামান, বরিশালের সারোয়ার হোসেন, জিয়াউর রহমান জিয়া, এ বি জাহিদ হোসেন বাবু, ঝিনাইদহের আজিম উদ্দিন ও মওলানা আবদুল লতিফ, সিলেটের হাফিজ কামরুল ইসলাম, মৌলভীবাজারের আবু রায়হান, লুৎফর রহমান হারুন, ফেনীর গিয়াস উদ্দিন, আবদুল আজিজ, জসিম উদ্দিন; কুমিল্লার শামীম আহম্মেদ, চট্টগ্রামের কামরুল ইসলাম চৌধুরী, কক্সবাজারের রেজাউল করিম, হাফেজ রফিকুল ইসলাম, হাফেজ সিরাজুল করিম, আনোয়ার উদ্দিন জাবেদ, গাইবান্ধার শিল্পী বেগম, আবদুল আজিজ, সিরাজগঞ্জের আবদুল আজিজ, নওগাঁর মশিউর রহমান ও আকরাম হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোরবান আলী, সাদিকুল ইসলাম, আবদুর রহিম, একরামুল হক, কুড়িগ্রামের একরামুল হক, বগুড়ার শফিকুর ওরফে নাজিম ও সাগর হোসেন, সোহেল মাহফুজ, সাতক্ষীরার ফকরউদ্দিন রাজি, বরগুনার বেলাল হোসেন, শহিদুল ইসলাম, আবদুল হক আব্বাসী, হাফেজ আবদুর রহমান, ভোলার মাওলানা মহিউদ্দিন, পটুয়াখালীর ইব্রাহিম ওয়ালিউল্লাহ, খুলনার হাফেজ মোহাম্মদ আবু তাহের, আবুল হোসেন ওরফে আবুল হাসেম,মাওলানা মোবারক আলী, মাওলানা নোমানসহ প্রায় ৫ শতাধিক জঙ্গিকে খুঁজছে র্যাব ও পুলিশ বাহিনী। এদের মধ্যে অধিকাংশ জঙ্গিকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করে। কিন্ত তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে। এরা নাশকতা চালাতে পারে এ আশঙ্কায় ইতিমধ্যে র্যাব সদর দফতর, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয়, বঙ্গভবন, কূটনৈতিকজোন, বিমানবন্দর, গণভবন রেলস্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালসহ দেশের স্পর্শকাতরস্থান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে এদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে সমন্বিত অভিযান চলছে।
সূত্র মতে, জঙ্গিদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগের মধ্যে আছে র্যাব ও পুলিশ। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। গত ১০ জুলাই দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও পুলিশ ও র্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বিশেষ বৈঠক হয়েছে। পলাতক জঙ্গিদের পাকড়াও করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ওই বৈঠকে।
আইজিপি একেএম শহীদুল হক আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর আছে। আমরাও তাদেরকে নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে এসেছি। এ ফাঁদে তাদেরকে আটকা পড়তেই হবে। তিনি বলেন, জনগণকে সাথে নিয়ে পুলিশ বাহিনী জঙ্গিবাদের মোকাবিলা করবে। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়। তারা কখনই উগ্র সন্ত্রাসবাদকে পছন্দ করে না,প্রশ্রয় দেয় না। সুতরাং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে জঙ্গিদের ঠাঁই নেই। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবেই।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, জেএমবি, হুজি ও হিযবুত তাহরিরের সদস্যরা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ‘ব্রেনওয়াশ’ করছে বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি। তাদের বিরুদ্ধে র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে। তাদের নেটওয়ার্ক আমরা খুব শিগগিরই গুড়িয়ে দিতে সক্ষম হবো বলে আশা করছি। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম