জীবন বাজি রাখা পুলিশের ২৯ সদস্য উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না
বিপ্লব বিশ্বাস : জীবন বাজি রেখে জঙ্গি হামলা প্রতিরোধের নজির তৈরি করে এখন হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন পুলিশের ২৯ সদস্য। তাদের সবাই উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। আহতদের কারও কারও শরীরে ঢুকেছে স্পিøন্টার, কেউ বা গ্রেনেড-গুলির আঘাতে জর্জরিত। তাদের অধিকাংশই ঝুঁকিমুক্ত হলেও যেরকম আন্তর্জাতিকমানের চিকিৎসা পাওয়া দরকার তা পাচ্ছেন না।
এছাড়া সরকার থেকে চিকিৎসক সরবরাহ, হাসপাতাল বা তাৎক্ষণিক জরুরি ওষুধ দিলেও আনুষাঙ্গিক যেসব খরচ তা মেটাতে হচ্ছে আহত পুলিশ সদস্যের পরিবারকেই।
পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স সূত্র জানায়, দুই জঙ্গি হামলার ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ২০ জন আছেন রাজধানীর ইউনাইটেট হাসপাতালে, ছয়জন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ), একজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং দুজন আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাদের সবাই ঝুঁকিমুক্ত কি না জানতে চাইলে পুলিশ মহাপরিদর্শকের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে সার্বিক তথ্য তার কাছে নেই। তবে চিকিৎসার সব ব্যয় সরকার বহন করছে বলে তিনি দাবি করেন।
পুলিশের আহত ২৯ সদস্যের মধ্যে ২৩ জনই একসাথে গুলশানে হলি আর্টিজানে গ্রেনেড বিস্ফোরণের মুখে পড়ে আহত হয়েছিলেন। সে গ্রেনেডটি অত্যাধুনিক, বিদেশে তৈরি এবং খুবই শক্তিশালী একটি গ্রেনেড ছিল বলে তদন্তে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারীরা। ওইদিন আহত প্রত্যেকেই শরীরে ক্ষত নিয়ে এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। প্রত্যেকের শরীরে গ্রেনেডের স্পিøন্টার রয়েছে। এগুলোর সব দেশে চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারে শরীর থেকে বের করা সম্ভব নয়।
হামলায় আহত পুলিশ সদস্যদের বেশ কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত দেশের বাইরে পাঠানো প্রয়োজন। কিন্তু একদিকে এ বিষয়ে সরকার এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোরও নেই আর্থিক সঙ্গতি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হলি আর্টিজান ট্র্যাজিডিতে গ্রেনেডে আহত গুলশান জোনের এডিসি আব্দুল আহাদ বলেন, তার হাত পায়ে যে স্পিøন্টারগুলো বিঁধে আছে তা এখনো যন্ত্রণা দিচ্ছে। সেগুলো কবে বের করা হবে, কত দিনে তার চিকিৎসা শেষ বা হাসপাতালেই বা কতদিন থাকতে হবে তার কিছুই তিনি জানেন না।
উল্লেখ্য, হলি আর্টিজানে অভিযান শুরুর প্রথম চেষ্টাতেই আহাদ থেকে মাত্র একগজের দূরত্বে গ্রেনেডে নিহত হন ওসি সালাহউদ্দিন। বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং মাথায় হেলমেট থাকায় আহাদ প্রাণে বেঁচে যান।
চিকিৎসারত আহত একজন পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এখনো চিকিৎসার খরচ প্রায় সবটাই সরকার বহন করছে। কিন্তু আগের মতো খোঁজখবর বা তৎপরতা নেই। প্রথমদিকে সবাই খুব তৎপর ছিল। তার ওপর হাসপাতালে থাকলে আনুষাঙ্গিক অযাচিত খরচ চলে আসে। যেগুলো সরকারের কাছে চেয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই। এরমধ্যে স্বাভাবিক জীবনে আবার কতটা তারা ফিরতে পারবেন কিংবা আবারও নিয়মিত দায়িত্ব পালনের মতো শারীরিক সক্ষমতা পুরোপুরি ফিরে পাবেন কি না এ নিয়েও শঙ্কার কথা জানান আহত এই পুলিশ সদস্য।
আহত পুলিশ সদস্যদের আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর কোনো চিন্তা সরকারের আছে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। চিকিৎসকরা ভালো বলতে পারবেন। তার দাবি আহত পুলিশ সদস্যরা অনেকেই ভালো হয়ে গেছেন। এ বিষয়টি পুরোপুরি তার বলার বিষয় নয়, চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন মন্ত্রী। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম