বিএনপির জাতীয় ঐক্য প্রস্তাব সরকারের প্রত্যাখ্যান জাতীয় ঐক্য গড়ার বিকল্প উপায় খুঁজছে বিএনপি
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সঙ্গে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য গড়তে চেয়েছিল। এনিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সরকারের কাছে লিখিত কোনো প্রস্তাব না দিলেও গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে হামলার পর সংবাদ সম্মেলন করে ও বিবৃতি দিয়ে এবং বক্তৃতায় জাতীয় ঐক্য গঠন করার কথা বলেছেন। বিএনপি মনে করেছিল সরকার এই ইস্যুতে বিএনপিকে সরকারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ দিবে। কিন্তু সরকার তা করবেনা বলে জানিয়েছে। বলেছে আগুন সন্ত্রাস ও পেট্রলবোমা মেরে যারা মানুষ হত্যা করে তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। তবে, বিএনপিও জাতীয় ঐক্য করার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। সরকারের নেতৃত্বে না হলেও তারা ঐক্য করার জন্য বিকল্প উপায় খুঁজছে। এই জন্য বিভিন্ন মানুষকেও ঐক্যবদ্ধ করারও চেষ্টা করছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, এখন সময় এসেছে ঐক্য গড়ার। দেশ আজ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কবলে পড়েছে। আগে আশঙ্কা থাকলেও গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার মতো কোনো ঘটনা ইতোপূর্বে ঘটেনি। এ ধরনের ঘটনা ঘটায় ধারণা করা হচ্ছে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ কঠিন সময় পাড়ি দেবে। সেই অবস্থা বিবেচনা করে সবাই যে যার অবস্থানে আছে সেখান থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাস মোকাবিলা করার ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া এ ব্যাপারে ব্যাপক জনসচেতনতা প্রয়োজন। সমাজের যে সব সন্তান জঙ্গি হয়ে যাচ্ছে তাদেরকে ওই পথে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। যারা গেছে তাদেরকেও ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসিত করতে হবে।
বিএনপির সূত্র জানায়, সরকার আমাদেরকে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না। কিন্তু আমরা সুযোগ চাই। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্যও সমাজে সচেতনতা তৈরি করার জন্য বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ করা প্রয়োজন। সরকার তা না দিলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এনিয়ে সারাদেশের সকল বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করে জনগণকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতন করতে চান। কিন্তু আমরা এ জন্য অনুমতি চাইলেই বলবে যে আমরা আগুন সন্ত্রাস করেছি জ্বালাও-পোড়াও করেছি। এর আগেও আমরা বলেছি বিএনপি আগুন সন্ত্রাস করে না।
সিনিয়র এ নেতা বলেন, সরকার আমাদেরকে এই ইস্যুতে ঐক্য করার জন্য না নিলে ও সুযোগ না দিলেও আমরা মাঠে থাকার কথা ভাবছি। আমরা সরকারকে এটাও বলতে চাইÑ এখন আমাদের বড় লক্ষ্য আগাম নির্বাচন নয়। বড় লক্ষ্য জাতীয় ঐক্য। সেই ঐক্য করতে পারলে দেশের বিপদ কাটবে। কিন্তু সরকার তা চাইছে না। কারণ সরকার মনে করে এখন যদি জাতীয় ঐক্য হয় তাহলে এর পরের পর্যায়েই জনগণ বলতে শুরু করবে দেশে গণতন্ত্র নেই। আর গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। নির্বাচন না দিলে জনগণের ক্ষোভ দমন করাও কঠিন হতে পারে। সরকার এই ধরনের আশঙ্কা থেকেই দেশের আশি ভাগ মানুষকে বাইরে রেখে ঐক্য করার কথা বলছে।
বিএনপির আরেক নেতা বলেন, সরকারতো ঐক্য না করলেও আমাদেরকে ঐক্য করতে হবে। জামায়াততো নিজেরা বলেছে জাতীয় ঐক্যে তারা বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না। দূরে সরে দাঁড়াতে হলে সেটাও করবে। সরকার জামায়াতকে ছাড়াই যদি ঐক্য করতে চায় তাহলে এখন জামায়াতের সরে দাঁড়ানোর কথা বলার পরওতো উদ্যোগ নেওয়া দরকার। তাত নিচ্ছে না। তাহলে বুঝতে হবে সরকার ঐক্যের কথা মুখে বললেও বাস্তবে চায় না। এজন্য অবস্থা যা আছে এর পরিবর্তন হবে না। তবে আমাদেরকে পরিবর্তন করাতে হবে। আর সেই জন্য আমরা সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতির জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার জন্য চিঠি দেব। এরপরও যদি অনুমতি না দেয় তাহলে সরকারের মূল উদ্দেশ্যটা জনগণ বুঝতে পারবে।
খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ট সূত্র আরও জানায়, আমরা জেলায় জেলায় ও দেশের বিভিন্ন স্তরে আমাদের কথাগুলো পৌঁছে দিতে চাই। এই জন্য ইতোমধ্যে ম্যাডাম দলের নেতা, জোটের নেতা, সম্পাদক ও মিডিয়ার নেতৃবৃন্দ, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। তা অব্যাহত রাখবেন। এতে করে সবাইকে ঐকমত্য করেই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূল রাখতে চাইছে।
২০ দলীয় জোটের সদস্য অপর একটি দলের চেয়ারম্যান বলেন, আসলে সরকার ঐক্য করতে চাইলে সেটা সম্ভব। কিন্তু সেই ঐক্য করার জন্য যে আন্তরিকতা সরকারের প্রয়োজন তা নেই। আজ না হয় কাল সরকারের মধ্যে সেই বোধ আসতেই হবে। আজকে বিএনপি ও জামায়াতকে সরকার নিজেদের শত্রু মনে করছে। কিন্তু তা নয়। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ যেভাবে বিশ্বব্যাপী মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে তা নির্মূল করার জন্য সবাইকেই এক হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সরকার যদি আজকের দিনে এসেও সব কিছু মনে করে বিএনপি ও জামায়াত করেছে তাহলে সরকারের চিন্তা চেতনার সীমাবদ্ধতাই প্রকাশ পায়। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি