
তুরস্ক মৃত্যুদ-াদেশ ফিরিয়ে আনলে তা হবে অগ্রহণযোগ্য : ইইউ
লিহান লিমা : তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর শুদ্ধি অভিযানসহ দেশটির সরকার যেসব ব্যবস্থা নিচ্ছে সে ব্যাপারে ইইউ নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এজন্যে তুরস্ককে আইন মেনে চলতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য না হলেও তুরস্ক ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্য হওয়ায় ইইউ থেকে বলা হচ্ছে অভিযানের পর যেভাবে তুর্কিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে সেক্ষেত্রে দেশটির ইইউ আইন মেনে চলা দরকার। তুরস্কে প্রায় ৬ হাজার বিচারক, সামরিক কর্মকর্তাদের আটক করার পাশাপাশি ৮ হাজার ৭৭৭ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। মৃত্যুদ- নিষিদ্ধ হলেও সংবিধান সংশোধন করে এ দ- ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট এরদোগান চিন্তাভাবনা করছেন। আর ঠিক এমন সময়ে ইইউ নেতারা বলছেন, মৃত্যুদ- ফিরিয়ে আনলে তা হবে অগ্রহণযোগ্য। ইইউর সদস্য ২৮টি দেশে মৃত্যুদ- নিষিদ্ধ। সিএনএন/প্রেস টিভি
সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দফতর ব্রাসেলসে ইইউর পররাষ্ট্র এবং নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিনিধি ফ্রেডেরিকা মোগিরিনি বলেন, আমাদের আইন সুরক্ষিত। কোনো দেশই কোনো অজুহাতে এটি নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। তুরস্ক মৃত্যুদ-ের বিধান ফিরিয়ে আনলে দেশটি ইইউ সদস্যপদ পাবে না।
ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে তুরস্কে অভ্যুত্থানের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যখন সামরিকবাহিনী আক্রমণ করেছিল আমরা বলেছিলাম গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করা দরকার। এর মানে এই নয় যে, আইনের শাসন এবং দেশে ভারসাম্য বজায় রাখা হবে না। এটি তুরস্কের স্বার্থেই রক্ষা করা প্রয়োজন। তাই আমরা তাদের একটি শক্ত বার্তা পাঠিয়েছি।
ইইউ কমিশনার জোহানস হান বলছেন, তুর্কি সরকার সামরিক অভ্যুত্থানের আগেই গ্রেফতারকৃতদের নামের তালিকা ঠিক করে রেখেছিল। তালিকা দেখেই বোঝা যায় এটি নির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্যের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল।
বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডিডিয়ার রেইনডিয়ার বলেন, যারা সামরিক অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত ছিল তারা শাস্তি পাবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু আইনের শাসন রক্ষা করা আবশ্যক। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের আগেই আটককৃতদের তালিকা নির্ণয় করা হয়েছিল।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছেন, অভ্যুত্থানের সাথে জড়িতদের শাস্তির জন্য মৃত্যুদ-াদেশ আইন আবার চালু করা হতে পারে।
এরদোগানের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান ক্রুজ বলেছেন, মৃত্যুদ-াদেশ আবার চালু করা ‘অগ্রহণযোগ্য’। এখানে নির্বিচারে শাস্তি দেওয়া হতে পারে। বিচারব্যবস্থা এবং আইনের শাসনের কাঠামোর বাইরে কোনো ফৌজদারিব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, এখানে অবশ্যই খেয়ালখুশিমতো কার্যক্রম চলবে না। তিনি আরও বলেন, অস্ট্রিয়া ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সভায় খুব স্পষ্টভাবে এরদোগানের কার্যক্রমের সীমা নির্ধারণ করে দেবে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেন-মার্ক আয়রাউলত বলেছেন, তুরস্কে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি জেন-মার্ক আরও বলেন, সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তবে আমাদের সজাগ থাকতে হবে, তুরস্ক কর্তৃপক্ষ যাতে এমন কোনো ব্যবস্থা না করে যেন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নষ্ট হয়।
সোমবার তুরস্ক সামরিক অভ্যুত্থানে সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। অভ্যুত্থান ঘটানোর অভিযোগে তুরস্কের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মেহমেত দিসলি এবং অভ্যুত্থান পরিচালনাকারী হুলুসি আকারকে গ্রেফতার করা হয়। তুরস্কের গণমাধ্যম জানায়, এ পর্যন্ত ৩৬ জন জেনারেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ
