
‘মঙ্গোলিয়াতে রাষ্ট্রীয় ভোজ সভায় মাছ খেয়েই পেট ভরে গেছে আমার’
আনিসুর রহমান তপন : এগারতম এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলন (আসেম) উপলক্ষে যোগ দেওয়া সব রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের একটি করে ঘোড়া উপহার দিয়েছেন মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট সাখিয়া এলবেগ দুর্জ। তবে শেখ হাসিনাকে উপহার হিসেবে দেওয়া ঘোড়াটি অবশ্য বাংলাদেশে আনেননি প্রধানমন্ত্রী। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে পরিষদ সদস্যদের এ কথা জানান। মন্ত্রিসভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিসভার এক সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রী আলাপকালে জানান, আসেম সম্মেলনে যোগ দেওয়ায় ওনাকে একটি ঘোড়া উপহার দেওয়া হয়। তবে খাজনার থেকে বাজনা বেশি অর্থাৎ উপহার পাওয়া ঘোড়াটি বাংলাদেশে আনতে যে ঝঁক্কি-ঝামেলা এবং খরচ হবে সেটি ঘোড়ার প্রকৃত মূল্য অপেক্ষা অনেক বেশি। তাই ঘোড়াটি আনেননি প্রধানমন্ত্রী। তবে মঙ্গোলিয়ায় ঘোড়াটি থাকাকালে যাতে যতœœ-আত্তি হয় সে ব্যবস্থাও করে এসেছেন তিনি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে ঘোড়াটি রেখেছি (আস্তাবল) সেখানকার কর্তৃপক্ষকে বলে এসেছি, এটি বাংলাদেশের ঘোড়া। এটাকে দেখলে মনে করবেন এটি বাংলাদেশ। মঙ্গোলিয়াতে এই ঘোড়া বাংলাদেশের প্রতীক হয়ে থাকবে। তাই এর বিশেষ যতœ করতে হবে, এমন অনুরোধ জানিয়ে এসেছি আমি।
এসময় বিদেশি অতিথিদের উদ্দেশ্যে মঙ্গোলিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের দেওয়া রাষ্ট্রীয় ভোজ সম্পর্কে বলেন, সে দেশের প্রেসিডেন্ট সাখিয়া এলবেগ দুর্জ অত্যন্ত আন্তরিক ও ঘরোয়া পরিবেশে সম্মেলনে যোগ দেওয়া রাষ্ট্রীয় অতিথিদের আপ্যায়ন করিয়েছেন। সেখানে খাবারের মেন্যু সম্পর্কে শেখ হাসিনা হাসতে হাসতে বলেন, ভোজ সভায় আমাদের ঘোড়ার দুধ, এটি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার ও ঘোড়ার মাংসের কাবাব খেতে দেওয়া হয়। কাবাবটি আবার পাথর গরম করে তার মধ্যে ঘোড়ার মাংস ঝলসিয়ে এই কাবাব তৈরি করতে হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটা অত্যন্ত কঠিন ও সময় সাপেক্ষ। তারপরও এসব খাবার তৈরি করে মেহমানদের খেতে দেওয়া হয়। কারণ এসব মঙ্গোলিয়ার অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রধান খাদ্য। মঙ্গোলিয়ানদের কাছে এসব খুব মুখরোচক খাবার হিসাবে পরিচিত। তবে আলাপ করে জেনেছি, রান্না করা ঘোড়ার মাংস অনেক হার্ড (শক্ত)। দুধও একই রকম। সেকারণে এগুলো হজম হতে একটু সময় লাগে।
এদিকে আমার সঙ্গে একই টেবিলে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, জার্মানির চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মেরকেল, সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট টনি তানসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা ছিলেন। তো মুসলমান হিসাবে তো আমি ঘোড়ার মাংস খেতে পারি না। এসময় দেখলাম আমার দেখাদেখি এঙ্গেলা মেরকেলও ঘোড়ার মাংস খেতে ইতস্তত করছে। পরে তিনি আর খেলেনই না।
আর এদিকে মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট সব টেবিলে টেবিলে গিয়ে অতিথিদের খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেছেন। খাবার কেমন হয়েছে? খেতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা? সোজাকথা তিনি অতিথি আপ্যায়নে ছিলেন অনেক আন্তরিক। এই এক ফাঁকে তিনি আমাকেও জিজ্ঞেস করলেন ঘোড়ার মাংস খেয়েছি কিনা? কেমন লেগেছে? জবাবে আমি তাকে জানালাম না আমি খাওয়ার সময় পাইনি। কারণ আমিতো মাছের দেশের মানুষ। তাই তোমার এখানে মাছ দিয়ে রান্না করা খাবার খেয়েই আমার পেট ভরে গেছে।
সূত্র জানায়, এই বলে হাসতে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম
