
সহকর্মী ও পুলিশের ধারণা তারা সিরিয়ায় আইএসে যোগ দিয়েছে শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক স্ত্রী-সন্তানসহ নিখোঁজ
মাসুদ আলম : ঢাকা শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. খন্দকার রোকনউদ্দিন তার স্ত্রী সরকারি কবি নজরুল কলেজের ইংরেজি অধ্যাপক নাঈমা আক্তার দুই মেয়েসহ নিখোঁজ রয়েছেন। বড় মেয়ে রেজওয়ানা রোকন নাদিয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী। সে বিবাহিতা। তার স্বামী শিশির একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের ছাত্র। শিশিরও নিখোঁজ রয়েছে। ছোট মেয়ে রামিতা রোকন ভিকারুন্নিসা নূন স্কুলের ছাত্রী ছিল।
ডা. রোকনের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন জানান, রোকন খুবই ধর্মপ্রাণ ছিলেন। নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে চলতেন। তার স্ত্রীও সবসময় হিজাব পড়ে থাকতেন। তারা বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শিশু হাসপাতালে বিএনপি করার জন্য তার প্রমোশন হচ্ছিল না। এজন্য তিনি খুবই হতাশ ছিলেন। প্রায়ই তিনি তার সহকর্মীদের বলতেনÑ ইসলামে জিহাদের কথা। বলতেন, বাংলাদেশে ইসলাম নেই। ইসলামি দেশে চলে যেতে হবে।
এ বিষয়ে রামপুরা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত বছর মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে তারা নিখোঁজ হয়েছেন। তারা দেশে আছেন না কি বিদেশে অবস্থান করছেন, তা জানার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একইসঙ্গে তারা কোনো ধরনের জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছেন কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মালিবাগ চৌধুরী পাড়ার বি ব্লকের ৪২২ নম্বর বাসায় থাকতেন ডা. রোকন ও তার পরিবার। গত বছরের রমজান মাসে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা বলে নিখোঁজ হন তারা। রেজওয়ানা ও তার স্বামী শিশির নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ বিষয়ে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে রামপুরা থানায় কোনো ডিজি করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে তারা কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগদান করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাসার কেয়ারটেকার হেলাল উদ্দিন জানান, গত বছরের ১০ রমজানে ভ্রমণের উদ্দেশে সপরিবারে মালয়েশিয়া যান ডা. রোকন উদ্দিন। ২ মাস পর বাংলাদেশে থাকা তার ভাতিজির সঙ্গে শেষ যোগাযোগ করেন তিনি। এরপর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। ‘স্যার কবে ফিরবেন?’ মালয়েশিয়ার উদ্দেশে বিমানবন্দরের দিকে রওনা হওয়ার আগে কেয়ারটেকার হেলাল উদ্দিনের এ প্রশ্নের জবাবে ডা. রোকন বলেছিলেন, ‘দেশে আর ভালো লাগে না। মালয়েশিয়া ঘুরতে যাচ্ছি। সেখান থেকে কোনো ইসলামিক দেশে ভালো লাগলে স্থায়ীভাবে থেকে যাব।’
হেলাল উদ্দিন আরও জানান, রোকন উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুরে। মালয়েশিয়া যাওয়ার বছরখানেক আগেই রেজওয়ানা নাদিয়া ও শিশিরের বিয়ে হয়। বিয়ের পর শিশির শ্বশুরবাড়িতেই থাকত। একবছর আগে হঠাৎ তারা মালয়েশিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে কবে ফিরবে এ কথা জানায়নি।
গতকাল সোমবার সরেজমিন রোকন উদ্দিনের খিলগাঁওয়ের বাড়িতে গিয়ে জানা গেল, বাড়িটি তার স্ত্রী নাঈমা আক্তারের নামে রয়েছে। তার বাবা আলী আহমদ মৃত্যুর পূর্বে বাড়িটি মেয়ে নাঈমার নামে লিখে দিয়ে যান। রোকনউদ্দিন পরিবার মালয়েশিয়া যাওয়ার পর গত ১ বছর ধরে ৫তলা বাড়িটির তৃতীয় তলায় তার ভাতিজি শিখা তার এক কন্যার সঙ্গে থাকছেন। তবে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
কেয়ারটেকার আরও জানান, স্যার (রোকনউদ্দিন) ডাক্তার থাকা অবস্থায় পেশাগত জীবনে জাপান, সৌদি আরব, ভারত সফরে গিয়েছেন। চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তাদের সঙ্গে ৫টি লাগেজ ছিল। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে ভাতিজি শিখার বরাত দিয়ে হেলাল জানান, তার ভাতিজির সঙ্গে মালয়েশিয়া যাওয়ার ২ মাস পর কথা হয়েছে। তবে মেজর হাফিজ নামে সেনাবাহিনীতে কর্মরত তার ভাইয়ের সঙ্গে তিনি কয়েকবার যোগাযোগ করেছেন। মেজর হাফিজ মিরপুর ডিওএইচএসে থাকেন। সম্পাদনা : বিশ্বজিৎ দত্ত
