এ কোন ফ্যাশন!
ল্যাপটপটা ডিস্টার্ব করছে। সারাই করে আনব, সে সময়টা হচ্ছে না। ইঞ্জিনিয়ার পরিচিত, বাসাও কাছাকাছি। গেলে আড্ডা এবং কাজ দুটোই হয়। সঙ্গে আপার নিজ হাতে বানানো অসাধারণ চা আর টা তো আছেই।
শনিবার বিকেলে ল্যাপটপ নিয়ে তার বাসায় রওয়ানা হলাম। রোববার তার ছুটি। ঠিক করে রাখলে এক সময় গিয়ে নিয়ে আসব। বাসার কাছাকাছি আসতেই লক্ষ্য করলাম ১৪/১৫ জন তরুণের একটি দল। শার্ট প্যান্ট বিভিন্ন রকম হলেও একটি মিল চোখে পড়ল। সবারই দাঁড়ি আছে হাল ফ্যাশনের। আমি মনে মনে একটু ভীত হলাম। এতগুলো একই বয়সের ছেলে এখানে কোথা থেকে এলো? কোনো কোচিং সেন্টার তো এখানে নেই। ওদের ব্যাগে কি বই খাতা? নাকি অন্যকিছু? ভাবতে ভাবতেই এগোচ্ছি। এরই মধ্যে একটি ছেলে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। ভাবছি চাঁদা-টাদা চাইবে নাকি? সামনে এসে বলল, ম্যাডাম আসসালামু আলাইকুম, আমি আবদুল্লাহ। ওয়ালাইকুম আস্সালাম বলে, আমি ছেলেটির দিকে তাকালাম। দাঁড়িঘেরা মিষ্টি চেহারাটা আমার চেনা চেনা মনে হচ্ছে। মুহূর্তেই মন চলে গেল কয়েক বছর পেছনে। আমি জুয়োলজি ফিসারিজে পড়েছি। রেজাল্টের সঙ্গে সঙ্গেই এফএও’র বে অব বেঙ্গল প্রজেক্টে জয়েন করেছি বাবার শতভাগ সমর্থন এবং মার শতভাগ অসমর্থন নিয়ে। কর্মস্থল উখিয়া।
বাবার চাকরি সূত্রে ঢাকার আগে চট্টগ্রাম ছিলাম। চট্টগ্রাম কলেজে পড়েছি এবং সেই সূত্রে চট্টগ্রামে কিছু বন্ধুও আছে আমার। কিন্তু মার এককথা ঢাকার বাইরে চাকরি করা যাবে না। রোজ ফোন করেন। অবশেষে মার কথা মেনে চাকরিতে ইস্তফা দিলাম (কিছু শর্ত ছিল। ভঙ্গ হলো। অস্বস্তি হলো)। ছোটবেলা থেকেই লেখা এবং আঁকার অভ্যাস। চলে এলাম প্রিন্ট মিডিয়ায়। মার স্বস্তি। আমারও স্বস্তি। বেক্সিমকো মিডিয়ার ‘আনন্দভূবন’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক থাকাকালীন পরিবারকে সময় দেবার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলাম।
স্কুল, কলেজ এবং ভার্সিটিতে চাকরি করে আমার কিছু বন্ধু আছে। ওরা বলল, এই পেশাতেই পরিবারকে কিছুটা সময় দেওয়া যায়। আসলেও তাই। অতঃপর সাময়িকভাবে আমিও ওদের পদাঙ্ক অনুসরণ করলাম। সেই শুরুর বছরের ছাত্র এই ছেলেটি। বিজ্ঞান প্রজেক্টে ওর আগ্রহ এবং কাজ আমাকে মুগ্ধ করেছিল। এই আগ্রহের কারণেই আমি ওকে অনেক সহযোগিতা করেছিলাম।
ল্যাপটপ দিয়ে বেরিয়ে আসার সময়ও দেখলাম, ওরা রাস্তার মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে আছে। কোনোকিছু নিয়ে আলোচনা করছে। এবার আমি ডাকলাম, ‘আব্দুল্লাহ’ ছেলেটি প্রায় দৌড়ে আমার কাছে আসল। বললাম, তুমি এখন কি করছ? সে বলল, আমি এখন ফিল্ম মেকিংয়ের সঙ্গে আছি। এই যে আমার টিম, বলে সঙ্গের ছেলেদের ডেকে এনে বলল, আমার ফেভারিট টিচার। সবাই আমাকে একযোগে সালাম দেয়, আসসালামু আলাইকুম। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে মুখে সামান্য দাঁড়ি দেখে অবাক হয়ে ভাবি এ কোন ফ্যাশন, ফুলের মতো সুন্দর মিষ্টি চেহারাগুলো চিনতে পারি না!
লেখক : কলামিস্ট ও শিক্ষক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন